দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখা ও উন্নয়নের স্বার্থে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রস্তাগুলো বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। প্রস্তাবগুলো নিয়ে সংস্থাটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেন তিনি। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আজ ডিএসইর চেয়ারম্যান ড. আবুল হাসেমের নের্তৃত্বে বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ কমিশনারা। বৈঠকে সভাপত্বি করেন ড. এম খায়রুল হোসেন।

ডিএসইর প্রস্তাব বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট, বিনিয়োগ সীমা, সার্কিট ব্রেকার, লক-ইন, মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তিকরন ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।

এসব প্রস্তাবনাকে গ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। যা বাস্তবায়নে আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে ডিএসইকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ডিএসই কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবনা নিয়ে গেলে বিএসইসির চেয়ারম্যান এ আশ্বাস দিয়েছেন।

শেয়ারবাজারের উন্নয়নে আইপিও প্রক্রিয়ায় সংস্কার সংশোধনীর বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসইর পর্ষদ। এরমধ্যে বিশেষভাবে ভারসাম্য রাখার জন্য প্রাইভেট প্লেসমেন্টে পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব করেছে ডিএসই। যেসব প্লেসমেন্ট শেয়ারে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের শুরু থেকে ১ বছর লক-ইন (বিক্রয় অযোগ্য) ও ৫০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেছে স্টক এক্সচেঞ্জটি।

উদ্যোক্তা, পরিচালক ও প্লেসমেন্টহোল্ডারদের শেয়ারকে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডে (সিডিবিএল) পৃথক ক্যাটাগরিতে রাখার জন্য ডিএসই প্রস্তাব দিয়েছে। উদ্যোক্তা/পরিচালকদের শেয়ারেও লেনদেন শুরুর দিন থেকে লক-ইন হিসাব গণনার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া উদ্যোক্তা/পরিচালদের শেয়ার বিক্রির ঘোষণার ১৫দিন পরে তা বাস্তবায়নের সুযোগ রাখা, প্রত্যেক পরিচালকের ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ক্ষুদ্র মূলধনের কোম্পানির সার্কিট ব্রেকার প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই। এতে এ জাতীয় কোম্পানিগুলোর শেয়ারে অস্বাভাবিক উত্থানরোধ হবে। এছাড়া মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির চাহিদা পূরনে সরকারি ও বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য বিএসইসিকে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির বিনিয়োগ সীমা এককভাবে বিবেচনার জন্য করণীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিএসইসিকে পরামর্শ দিয়েছে ডিএসই কর্তৃক্ষ। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয় এমন বন্ড, ডিবেঞ্চার, প্রিফেনশিয়াল শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকে বিনিয়োগ সীমার বাহিরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর বিনিয়োগ সীমা বাজার দরের পরিবর্তে ব্যয় মূল্যকে ধরতে বলা হয়েছে।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, আমাদের প্রস্তাবনাগুলো প্রশংসাযোগ্য বলে জানিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। যা নিয়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর প্রস্তাবনাগুলো আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নে করণীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। এর আগে ৯ এপ্রিল চলমান বাজারের মন্দাবস্থা দূরীকরণে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের কাছে লিখিত প্রস্তাব চান বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন।

যেগুলো নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এবং বিষয়গুলো অর্থমন্ত্রী গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সমাধানে এগিয়ে আসবেন বলে তিনি আশাবাদি।

উল্লেখ্য, গত ৩ মাস ধরে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এসময় ডিএসইর প্রধান সূচক ৫৯৫০ থেকে ৬৯০ পয়েন্ট ৫২৬০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এমন পতনে বিনিয়াগকারীদের নাভিশ্বাস অবস্থা। যে কারনে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হয়েছে তারা। নিয়মিত ডিএসইর সামনে পতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভও করছে।