দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য একটি ফান্ড গঠন করতে অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সরকারি বিনিয়োগ ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। একই সঙ্গে চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করার অনুরোধও করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুঁজিবাজারের দরপতন যেন আর ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রতিদিনই কমছে সূচক, পাল্পা দিয়ে কমছে লেনদেনও। টানা দরপতন ঠেকাতে নেই তেমন কোনো উদ্যোগ। টানা দরপতন রেকর্ড ভঙ্গ করেছে গত কয়েক বছরের। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া লাগাতার দরপতন ১২তম সপ্তাহে গড়িয়েছে। স্মরণকালের মধ্যে এত দীর্ঘ দরপতনের রেকর্ড নেই। এর আগে ২০০৮ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত টানা এগারো সপ্তাহ দরপতন হয়েছিল।

এমন অবস্থায় নড়ে-চড়ে বসার চেষ্ঠা করছে অর্থমন্ত্রণালয়। গত ১৬ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো.আসাদুল ইসলাম এবং আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এক জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে উঠে আসে পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থ এবং এর থেকে উত্তোরনের উপায় কী হতে পারে।

এরই উদ্যোগ হিসেবে বাজারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য কিছু একটা করতে চায় মন্ত্রণালয়। বৈঠকে আলোচনার প্রস্তাবটি একটি পত্রের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার জন্য বলা হয়। সেই আলোকে গতকাল (১৭ এপ্রিল) এমন একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে আইসিবি।

প্রস্তাবনার মধ্যে অন্যতম বিষয়গুলো হলো আপদকালে পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য একটি ফান্ড গঠন করা এবং দীর্ঘ মেয়াদে আইসিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এই চিঠিতে বলা হয়েছে পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতেও পুঁজিবাজারের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে। আইসিবিও ওই আলোকে একটি ফান্ড গঠন করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি মনে করে দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আইসিবির সক্ষতমা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এমন অবস্থায় আইসিবির বন্ধ হওয়া পুরোনো কার্যক্রম আবরও চালু করতে চায়। এটি করতে পারলে আইসিবির নিজস্ব একটি ফান্ড তৈরি হবে। এর মাধ্যমে যাতে প্রতিষ্ঠানটি বাজারের খারাপ অবস্থায় সাপোর্ট দিতে পারে। এই প্রস্তাবনায় আইসিবির এক্সপোজারের কথাও বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক বলেন, পুঁজিবাজারের টানা দরপতন ঠেকাতে মন্ত্রণালয় বিভিন্নভাবে চেষ্ঠা করছে। প্রতিনিয়ত বাজারের খোজ-খবর নিচ্ছে। এর থেকে উত্তোরণের পথ কী;সেই বিষয়ে আমাদের মঙ্গে আলাপ আলোচনা করছে। গত ১৬ এপ্রিল এ নিয়ে একটি বৈঠকও হয়েছে।

তিনি বলেন, আইসিবি তার সক্ষমতা অনুযায়ী বাজারকে সাপোর্ট দিচ্ছে। আরও বেশি করে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আইসিবিকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। আইসিবির ৫০০ কোটি টাকার একটি ইউনিট ফান্ড এখন ৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এমন কিছু ফান্ড থাকলে বাজারকে সাপোর্ট দেওয়া সহজ হতো আইসিবির জন্য।

সানাউল হক বলেন, আইসিবিকে শক্তিশালী করার জন্য আগের সকল কর্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ প্রয়োজন। আইসিবি শক্তিশালী হলে পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়া সহজ হবে। এই বিষয়গুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ হচ্ছে।

উল্লেখ, ২০০২ সালে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) নির্দেশনা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে আইসিবি সরাসরি কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আইসিবি পুঁজিবাজারের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এমন অবস্থায় চাইলেই আইসিবি বাজারকে তেমন সাপোর্ট দিতে পারে না।