দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বীমা কোম্পানিগুলোর জালিয়াতি রোধে এবার সিঙ্গেল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথোরিটি (আইডিআরএ)। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি কোম্পানির মাত্র একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে। এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই কোম্পানিকে তার সব লেনদেন করতে হবে। আর এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা নেবে আইডিআরএ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোম্পানিগুলো তাদের পলিসিতে বড় ধরনের জালিয়াতি করছে। বর্তমানে কোম্পানিগুলোতে যে পরিমাণ পলিসি ইস্যু হয়, কাগজপত্রে দেখানো হয় তার অর্ধেকেরও কম। এ ক্ষেত্রে কোম্পানির নামে অনেক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কিন্তু বাস্তবে সংখ্যা কম দেখানো হয়। যেসব অ্যাকাউন্ট আইডিআরএসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাছে যাবে সেগুলোতে রাখা অর্থই কেবল কোম্পানির আয়ের হিসেবে দেখানো হয়।

বাকি পলিসির তথ্য গোপন রাখা হয়। এগুলো শুধু কোম্পানির ভেতরের লোকজন জানে। এজন্য ব্যাংকে আলাদা অ্যাকাউন্ট সংরক্ষণ করা হয়। আর কমিশন বাণিজ্যসহ অধিকাংশ অতিরিক্ত ব্যয় এসব অ্যাকাউন্ট থেকে পরিশোধ করা হয়। অন্যদিকে পলিসির মেয়াদ শেষে গ্রাহকের টাকা পরিশোধের সময় নানা টালবাহানা শুরু করে।

সূত্র বলছে, সাধারণ বীমার ক্ষেত্রে এটি খুবই সহজে করা হয়। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের পর কিছু সাধারণ বীমার পলিসির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এগুলোর নিয়ম হল পলিসি করার পর অগ্নিকাÐসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর দুর্ঘটনা না ঘটলে কিছু দিতে হবে না। এ ক্ষেত্রে পলিসির মেয়াদ শেষ হলে প্রিমিয়ামের টাকার পুরোটাই বীমা কোম্পানিগুলো পায়। এসব পলিসিতে সরকারের মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) টাকাও কোম্পানিগুলো আত্মসাৎ করে।

আর এসব টাকা কোম্পানির মূল অ্যাকাউন্টে দেখানো হয় না। এগুলো আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে সংরক্ষণ করা হয়। এই জালিয়াতি চিহ্নিত করার জন্য কোম্পানির অ্যাকাউন্ট পরিচালনার ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে। কোম্পানিগুলোর জন্য মাত্র একটি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই কর্তৃপক্ষের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে কোম্পানিগুলোর কাছে নির্দেশনা যাবে। এক্ষেত্রে বর্তমানে কোন কোম্পানির কয়েকটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তা চিহ্নিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেবে আইডিআরএ।

আইডিআরএ সূত্র জানায়, দেশের ৭৮টি বীমা কোম্পানির মধ্যে জীবন বীমা ৩২টি এবং সাধারণ বীমা ৪৬টি। দুই খাত মিলিয়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৪৭টি। দেশের অর্থনীতির আকার অনুসারে কোম্পানি অনেক বেশি। কিন্তু এরপর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বীমা খাতের অবদান ১ শতাংশেরও কম। এর বড় কারণ হল: কোম্পানিগুলোর সীমাহীন প্রতারণার কারণে বিশাল এই খাতের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা।

কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই রাজনৈতিক বিবেচনায় বেশকিছু বীমা কোম্পানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব কোম্পানির পেছনে বড় মাপের রাজনৈতিক নেতাদের আশীর্বাদ রয়েছে। ফলে এরা কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছেন না। ২০১০ সালে নতুন বীমা আইন হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে।