দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রাইভেট প্লেসমেন্ট ও বন্ড ছেড়ে অর্থ উত্তোলনে সাড়া না মিললেও আরপিওতে টাকা উত্তোলনের চেষ্টায় ইউনাইটেড এয়ার। অতীতে তালিকাভুক্ত দুটি কোম্পানির এ প্রক্রিয়ায় অর্থ উত্তোলন করলে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের পুঁজিবাজারে রিপিট আইপিও প্রচলিত রয়েছে। নিয়মানুযায়ী তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে রিপিট আইপিওর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করতে পারে। আমাদের দেশেও এমন নিয়ম রয়েছে।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দুটি কোম্পানি আরপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন করেছে। কিন্তু দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারিত হয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এই প্রক্রিয়ায় টাকা তুলে কোম্পানিগুলো লাভবান হলেও নিঃস্ব হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এ কোম্পানি দুটি হচ্ছে গোল্ডেনসন ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রিপিট আইপিওর মাধ্যমে সর্বশেষ বাজারে আসা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) আরপিওর শেয়ার এখন বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরপিওর মাধ্যমে শেয়ার পেয়েও তাদের এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে। এদিকে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট ও বন্ড ছেড়ে অর্থ উত্তোলনে সাড়া পায়নি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেড। তাই এখন রিপিট পাবলিক অফারিংয়ের (আরপিও) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের পরিকল্পনা করছে কোম্পানিটি।

এখানে বিনিয়োগে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট আস্থা আছে বলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবি। আর সেই আশায় শেয়ার ছেড়ে এই টাকা উত্তোলন করতে চায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ইউনাইটেড এয়ার।

২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া উড়োজাহাজকে উড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৬ সালে কোম্পানিটিকে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ৪০ কোটি সাধারণ শেয়ার বিক্রি করে ৪০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

একইবছর বন্ড ছেড়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আরও ২২৪ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু কোম্পানির প্রতি দেশিও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশিদের আস্থা কম থাকায় সব টাকা উত্তোলন করতে পারেনি।

প্রাইভেট প্লেসমেন্টের ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় দেড়’শ কোটি টাকা উত্তোলন করতে পেরেছে। কিন্তু বাকি অর্থ বিদেশি প্রতিষ্ঠান সুইফট এয়ার কার্গো, ফিনিক্স এয়ারক্রাফট লিজিং ও টিএসি অ্যাভিয়েশনের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারেনি। অন্যদিকে দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বন্ড ছেড়ে টাকার উত্তোলন করতে চেয়ে সাড়া মেলেনি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকায় কোম্পানির অনেক ঋণ জমেছে। পাশাপাশি দেশ-বিদেশে থাকা সম্পদগুলোও নষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন কারণে সংকটের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে বিমান পরিবহন খাত। দেশি-বিদেশি অনেক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গেছে। ইউনাইটেডের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশি-বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সন্দিহান। এ অবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের খুব বেশি সাড়া নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনাইটেড এয়ারওয়জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্লেসমেন্টের কিছু টাকা পেয়েছি। তা দিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রকৃত ঋণ পরিশোধ করেছি। উড়োজাহাজগুলো চলাচল শুরু করলেই বাকি টাকা আস্তে আস্তে পরিশোধ করে দিতে চাই।’

তিনি দাবি করেন, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট আগ্রহ আছে। কোম্পানিটাকে রান করাতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি, বিনিয়োগকারীরাও আমাদের সহযোগিতা করবে বলে আশা করছি। আমরা আরপিওর মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে প্রস্তাব রেডি করছি। অতিদ্রুত স্টক এক্সচেঞ্জ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দেবো কোম্পানিটিকে দাঁড় করানোর জন্য।

২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ারের বর্তমান মূল্য ২দশমিক ৬০ টাকা। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যর কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকের হাতে এখন মাত্র ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ আর বাকি ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

কোম্পানির দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ রয়েছে ১৭৬ কোটি ৩৭ লাখ ৮ হাজার টাকা। স্বল্প মেয়াদি ঋণ রয়েছে ১১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের সর্বশেষ ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে।

২০১১ সালে একটি শেয়ারের বিপরীতে ১টি শেয়ার ছেড়ে টাকা উত্তোলন করেছে। অর্থাৎ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসার ১ বছর পর রাইট শেয়ার ছেড়ে টাকা উত্তোলন করেছে।