দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা বাড়ানোসহ দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) অনুষ্ঠেয় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় এসব সিদ্ধান্ত অনুমোদন পেতে পারে। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক মোঃ রকিবুর রহমান বলেছেন, বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে আমরা বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। এই বাজারকে রক্ষা করা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, পর্ষদ সভার আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রির আইপিওর ইস্যু, মুন্নু সিরামিকের উদ্যোক্তার শেয়ার বিক্রি, সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্বপ্নের ‘কথিত’ লোকসান, আইপিও ইস্যুসহ বেশ কিছু বিষয়

জানা গেছে, পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআই লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড (স্বপ্ন) এর ধারাবাহিক লোকসানের প্রেক্ষিতে বিষয়টি পর্যালোচনা ডিএসই যে কমিটি গঠন করেছিল, বৃহস্পতিবারের পর্ষদ বৈঠকে সেই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হবে।

কমিটি এসিআই এর গত কয়েক বছরের আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনা করে লোকসানের বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করছে। তাই তাদের সুপারিশে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে অনুরোধ জানানোর কথা বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ গত ২৬ এপ্রিল পুঁজিবাজার অস্থিরতার নেপেথ্যে মুন্নু গ্রুপ ও কারসাজি চক্র জড়িত শিরোনাম সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসি। গত ৪ জানুয়ারি মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ৭ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। এর বড় অংশই ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাড়তি দামে পরিচালকের শেয়ার বিক্রি করার উদ্দেশ্য থেকেই কোম্পানিটি পরিত্যাক্ত বা ওয়েস্টেজ জিনিস বিক্রির নামে বাড়তি আয় দেখিয়ে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের মূল্য বাড়িয়ে ছিলেন।

এদিকে কোম্পানির একটি সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনে মুন্নু সিরামিকের শেয়ারের পতনের পেছনে কোম্পানিটিতে অন্তকলহ প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকায় রয়েছে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অর্থ পরিচালকের দ্বন্ধ। এই দ্বন্ধে এরইমধ্যে অর্থ পরিচালক মুন্নু সিরামিক থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের গুজ্জন ছিল। অন্যদিকে, কোম্পানিটির বড় শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে কোম্পানি কর্তৃপক্ষেরও দ্বন্ধ দেখা দিয়েছে। এ কারণে কোম্পানিটির শেয়ার দরে বড় পতন দেখা দিয়েছিল।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের তথাকথিত কিছু বড় বিনিয়োগকারী যোগসাজস করে কোম্পানি দুটির শেয়ার দরে বড় বিপর্য়য় ঘটিয়েছে। বাজারকে অস্থির করার পেছনেও এসব বিনিয়োগকারীর হাত রয়েছে বলে তারা মনে করেন। বাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে এসব অশুভ কারসাজি চক্রকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

নাম প্রকাশে অনিশ্চিুক এক সিকিউরিটিজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পুঁজিবাজার অস্থিরতার নেপেথ্যে মুন্নু সিরামিক ও মুন্নু স্টার্ফলার দায়ী। কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা ও এক কারসাজি চক্র বেশি দর শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে গেছেন। বাজারে মুন্নু গ্রুপের বড় অঙ্কের টাকায় শেয়ার বিক্রির ফলে দরপতন তরান্বিত হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, গত যা ৩ মার্চ তারিখে মুন্নু সিরামিকসের দর ছিল ৪৪১ টাকায়। এসময় বাজারে নানা গুজব ছড়িয়ে কোম্পানির পরিচালক ও কারসাজি চক্রের মুল হোতা মিজানুর রহমান শেয়ার বিক্রি শুরু করেন।

শেয়ার বিক্রির ফলে দরপতন আরো তরান্বিত হয়। ফলে টানা দর কমতে কমতে ২০৭ টাকায় নামলে আবার কারসাজি করে বুধবার দিনের শুরুতে শেয়ার ২৬১ টাকায় লেনদেন হলেও দিনশেষে কোম্পানির লেনদেন হয় ২৩২ টাকায়। এদিকে ঐ চক্রটি আবার নতুন করে মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে শুরু করছেন বলে সুত্রটি জানায়। কোম্পানিটির খারাপ ইপিএস দিয়ে শেয়ারটি কম দামে হাতিয়ে নেয় তারা।