দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে বড় ব্যাংকগুলোকে ৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আস্থা সঙ্কটে থাকা পুঁজিবাজারে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে বিদ্যমান বিনিয়োগসীমা সংক্রান্ত আইন পরিবর্তন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তন ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার, কাটবে তারল্য সংকট, বাড়বে লেনদেন এমন মন্তব্য করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

তাছাড়া সরকারের নীতি নির্ধারকসহ সব মহলে আন্তরিকতার ফলে বাজার কিছুটা স্থিতিশীলতার আভাস দিচ্ছে। তবে বাজারের এ আভাসে পুরোপুরি এখনো দু:চিন্তা কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। তারপর কিছুটা স্বস্তিতে তারা। কারন দীর্ঘ দিন পর বাজার কিছুটা স্থিতিশীলতার আভাসে বিনিয়োগকারীদের মাঝে স্বস্তির নি:শ্বাস ফিরে এসেছে।

ঈদ পরবর্তী বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ভাবতে শুরু করবেন বলে একাধিক বিনিয়োগকারীরা জানান। অন্যদিকে টানা সাড়ে ৩ মাস যাবত দরপতনে থাকা দেশের পুঁজিবাজার পাঁচ সুসংবাদে (ইস্যুতে) এখন ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারী এবং বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি, সহজ শর্তে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ঋণ সহায়তা দেওয়া এবং আসছে বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা রাখছে সরকার। এসব সুসংবাদের ফলে পুঁজিবাজার নিয়োগকারীদের মধ্যে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, তা দূর হবে। পাশাপাশি তারল্য সংকটও কমবে। তাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিশেয়নের প্রেসিডেন্ট ও ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সরকার পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি, পুঁজিবাজার ভালো হবে।

বাংলাদেশ মাচেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেডিসডেন্ট ছায়েদুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার বাড়ানোর পাশাপাশি লোনগুলো রি-সিডিউল করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকের আয় বাড়বে। মুনাফাও হবে। এতে একদিকে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সক্ষমতাও বাড়বে।

পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারবে। এছাড়া আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসছে। তাতে আমি মনে করি, আগামীতে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিনিয়োগকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এক্সপোজার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার যে সারক্যুলার জারি করেছে তার ফলে ব্যাংকগুলো নতুন করে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের সক্ষমতা পেল। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করলে পুঁজিবাজার এমনিতে ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ ব্যাংকিং সেক্টর পুঁজিবাজারে মোট বাজার মূলধনের ৩০ শতাংশ অবদান রাখে।

আব্দুর রাজ্জাকের মতই সাড়ে ২৮ লাখ অ্যাকাউন্টধারীর সবারই প্রত্যাশা, পুঁজিবাজার রোববার থেকেই ঘুরে দাঁড়াবে। সেন্ট্রাল ডিপোজিটারি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মিলে ২৮ লাখ ৪৭ হাজার ৫৬৪টি বেনিফিশিয়ারি ওনার (বিও) অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে চলা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের অন্তত ৬০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দুই বাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ডিএসইর বিনিয়োগকারীদের ৩০ হাজার আর সিএসইর বিনিয়োগকারীদের মূলধন কমেছে ৩১ হাজার কোটি টাকা। দরপতনের প্রতিবাদে মতিঝিলের রাস্তায় বিক্ষোভে নামেন বিনিয়োগকারীরা। তারপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একগুচ্ছ প্রদক্ষেপ নেওয়া হয়। আর সেগুলো এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে।

উদ্যোগগুলো হচ্ছে-ব্যাংকের বিনিয়োগের সক্ষমতা বৃদ্ধির বেমেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ, যা দৈনন্দিন লেনদেনে প্রভাব ফেলে না তা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসাবে ধরা হবে না, বিদ্যমান নিয়মে ব্যাংকগুলোর আদায় করা মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম হিসাবে রক্ষিত স্থিতি, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিং-এর ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।

সমন্বিত পদ্ধতিতে ব্যাংক ও তার সাবসিডিয়ারি মিলে বিনিয়োগ করতে পারে ৫০ শতাংশ। ১৬ মে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের করম একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়, পুঁজিবাজারের ব্যাংকগুলোর এক্সপোজারে এখন থেকে সাধারণ শেয়ার, প্রেফারেন্স শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার, বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদি বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হবে না।

আইসিবির সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ: পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ও আসলসহ আদায় করা ৮৫৬ কোটি টাকা পুনর্ব্যবহারের জন্য আইসিবিকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তহবিলটির মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

আইপিও, প্লেসমেন্ট বন্ধ: স্টেকহোল্ডারদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত আইপিও আবেদন না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস, ২০১৫ এর সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ সংশোধন হওয়ার আগ পর্যন্ত চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল থেকে আইপিও সংক্রান্ত নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না। তবে এরই মধ্যে যেসব কোম্পানির আইপিও আবেদন জমা পড়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিবেচনা করা হবে।

একই সঙ্গে বিএসইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ৩০ এপ্রিল থেকে অ-তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির মূলধন উত্তোলন সংক্রান্ত কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না। তবে এরই মধ্যে যেসব অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মূলধন উত্তোলনের (ক্যাপিটাল রাইজিং) আবেদন জমা পড়ে আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিবেচনা করা হবে।

লক-ইনের সময় বৃদ্ধি: নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিক্রির চাপ কমাতে লক-ইনের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এজন্য নিয়মে পরিবর্তন এনে লেনদেনের প্রথম দিন থেকে লক-ইন গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগে প্রসপেক্টাস ইস্যুর তারিখ থেকে লক-ইন গণনা করা হত। এ পরিবর্তনের ফলে ভিএফএস থ্রেড ডাইং, এমএল ডাইং, ইন্দো-বাংলা ফার্মা, সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস, কাট্টালি টেক্সটাইল, এসএস স্টিল, স্কয়ার নিট কম্পোজিট ও জেনেক্স ইনফোসিসের লক-ইনের সময় বেড়েছে।

২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে কঠোর: প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), প্লেসমেন্ট, আইপিও-পরবর্তী বোনাস শেয়ার এবং উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের এককভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত বিদ্যমান নোটিফিকেশনের একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যেসব কোম্পানিতে ২ শতাংশ এবং ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই তাদের কোটা পূরণ করতে হবে। এছাড়াও আসছে বাজেটে থাকছে বিশেষ প্রণোদনা।