দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি চাইলেই আর আগের মতো বোনাস দিতে পারবে না। লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস দিতে হলে তার পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে। আর সেই কারণটি ব্যাখ্যা করে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আকারে প্রকাশ করতে হবে। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তটি কার্যকরে শিগগিরই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। বিএসইসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুসারে কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণ, সুষমকরণ, আধুনিকীকরণ (বিএমআরই), গুণগত মান উন্নয়ন ইত্যাদির জন্যে বিনিয়োগ প্রয়োজন হলেই কেবল বোনাস দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে (Price Sensitive Information-PSI) বোনাস দেওয়ার কারণ এবং বোনাসের বিপরীতে রক্ষিত অর্থের ব্যবহারের খাত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

সূত্র জানিয়েছে, লাগামহীনভাবে বোনাস ইস্যুর কারণে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় তাদের স্বার্থে বোনাস শেয়ারের রাশ টেনে ধরতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) দাবি জানিয়ে আসছিল। এর প্রেক্ষিতে বিএসইসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ, বোনাস হচ্ছে শেয়ারহোল্ডারদেরকে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার পরিবর্তে তার বিপরীতে শেয়ার দেওয়া। বোনাস দেওয়া হলে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়। তাই অকারণে বোনাস দেওয়া হলে তাতে কোম্পানির মুনাফা বাড়ে না। উল্টো একই মুনাফা মুনাফা বেশি সংখ্যক শেয়ারে ভাগ (Dilution) হয় বলে শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস কমে যায়। তাতে লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতাও আনুপাতিক হারে কমে আসে।

সাধারণত ব্যবসা সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন, বিএমআরই ইত্যাদির জন্য পুনর্বিনিয়োগ প্রয়োজন হলে কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে বোনাস দিয়ে থাকে। কারণ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট অর্থ কোম্পানির তহবিল থেকে বের হয়ে যায়। তাতে পুনর্বিনিয়োগের জন্য তহবিলের কিছুটা সঙ্কট দেখা দেয়। কিন্তু বোনাস দিলে ওই অর্থ কোম্পানির তহবিলেই থেকে যায়। তাই পুনর্বিনিয়োগ সহজ হয়।

কিছু অসাধু উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারীদের ঠকানো ও নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যে বোনাস শেয়ার এর সুযোগের অপব্যবহার করে আসছিল। মোটাদাগে দুইভাবে বোনাসকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার বানানো হয়। প্রথমত উদ্যোক্তা-শেয়ারে লক-ইন এর কারণে ৩ বছর পর্যন্ত তা বিক্রি করা যায় না বলে অসাধু উদ্যোক্তারা বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে প্রাপ্ত বোনাস শেয়ার বাজারে বিক্রি করে দেয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে আসা আইপিওগুলোর ক্ষেত্রে এই ঘটনা বেশি ঘটেছে। দুর্বল মৌলের কোম্পানি হয়েও হিসাব কারসাজির মাধ্যমে ভালো মুনাফা দেখিয়ে বাজারে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। আর এই বাড়তি দামে শেয়ার বিক্রি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

অন্যদিকে অনেক দুর্বল মৌলের কোম্পানি যার লভ্যাংশ দেওয়ার সামর্থই নেই, সেই কোম্পানিও কৃত্রিম মুনাফা দেখিয়ে শেয়ারমূল্য কারসাজি করেছে। কোনো কোনো কোম্পানি বছরের পর বছর বোনাস দেওয়ায় পরিশোধিত মূলধন ও শেয়ারসংখ্যা বাড়তে বাড়তে শ্বেতহস্তিতে পরিণত হয়েছে। দিন দিন আরও দুর্বল ও রুগ্ন হয়েছে এসব কোম্পানি। এসব কারণে বোনাসে লাগাম টেনে ধরার দাবি উঠে।