দেশ প্রতিক্ষন, ঢাকা: অব্যাহত দরপতনে পুঁজিবাজারের প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম ‍মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তব্যে যার প্রতিফলনও দেখা গেছে।বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৮ মিনিটে জাতীয় সংসদে সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রীর লেখিত বাজেট বক্তব্য হবহু তুলে ধরা হলো: শেয়ারবাজারে সুশাসন: একটি শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার। একটি দেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালী সেই দেশের পুঁজিবাজারটিও স্বাভাবিক নিয়মেই শক্তিশালী থাকবে। আমরা যেমন চাই আমাদের দেশের জন্য একটি শক্তিশালী অর্থনীতি।

ঠিক তেমনিভাবেই আমরা দেখতে চাই একটি বিকেশিত পুঁজিবাজার। শিল্প বিনিয়োগে দীঘমেয়াদি ঋণ স্বল্পমেয়াদি আমানতের বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানের প্রবণতা লক্ষনীয়, যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দেখা যায় না। এতে ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হয়। আর তাতে চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং ঋণ গ্রহীতারা।

আমরা পুঁজিবাজার হতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সংগ্রহের ঋণগ্রহীতাদের উৎসাহ প্রদানে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রণোদনা স্কীমের আওতায় ৮৫৬ কোটি টাকা আবর্তনশীল ভিত্তিতে পুন:ব্যবহারের জন্য ছাড় করা হয়েছে।

আগ্রহী বিনিয়োগকারীদেরকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পূর্বে এ বাজার সম্পর্কে পরিপালন নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি জোরদার করা হবে। এই বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক প্রণোদনা থাকছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিসূহের জন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড আয় করমুক্ত থাকবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার হতে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ডের উপর দ্বৈত কর পরিহার করা হবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

পুঁজিবাজারে কোনো রুগ্ন কোম্পানিকে যদি কোনো আর্থিক দিক থেকে সবল কোম্পানি আত্মীকরণ করতে চায় সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রয়োজনে দরকষাকষির মাধ্যমে কিছুটা বিনিয়োগ সুবিধা দিয়ে হলেও এ কাজটা করা গেলে পুঁজিবাজার অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আসবে বলে আমরা মনে করি। এ প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়বে এবং স্থিতিশীলও থাকবে।

পুঁজিবাজার প্রণোদনা: কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীগণ কোম্পানি থেকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রাপ্তির প্রত্যাশা করেন। সে বিবেচনায় ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান পঁজিবাজারে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজারে শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পরিবর্তে স্টক ডিভিডেন্ড তথ্য বোনাস শেয়ার বিতরণের প্রবণতা কোম্পানিসমূহের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এতে বিনিয়োগকারীগণ তাদের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্টক ডিভিডেন্ডের পরিবর্তে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানকে উৎসাহিত করার জন্য কোন কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে উক্ত স্টক ডিভিডেন্ডের উপর ১৫ শতাংশ কর প্রদানের বিধান প্রস্তাব করেছি।

কোম্পানির অর্জিত মুনাফা থেকে শেয়ারহোল্ডারগণ তথা : বিনিয়োগকারীদেরকে ডিভিডেন্ড দেয়ার পরিবর্তে রিটেইন্ড আর্নিংস বা বিভিন্ন ধরনের রিজার্ভ হিসাবে রেখে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এতে প্রত্যাশিত ডিভিডেন্ড প্রাপ্তি থেকে বিনিয়োগকারীগণ বঞ্চিত হচ্ছেন এবং পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ ধরনের প্রবণতা রোধ করা প্রয়োজন।

এ জন্য কোনো কোম্পানির কোন আয় বছরে রিটেইন্ড আর্নিংস, রিজার্ভ ইত্যাদির সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে যতটুকু বেশি হবে তার উপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ কর প্রদানের বিধান প্রস্তাব করছি।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগণকে প্রণোদনা প্রদান এবং পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের হাতে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি হতে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ড আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।

নিবাসী কোম্পানির ডিভিডেন্ড আয়ের উপর একাধিকবার করারোপণ (Multilayer taxation on dividend) রোধ করার বিধান গতবছর কার্যকর করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহী করার জন্য এ বছর নিবাসী ও অনিবাসী সকল কোম্পানির ক্ষেত্রে এ বিধান কার্যকর করার প্রস্তাব করছি। এর ফলে, নিবাসী কোম্পানির পাশাপাশি অনিবাসী কোম্পানির ডিভিডেন্ড আয়ের উপরও একাধিকবার করারোপণ হবে না।