দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: হঠাৎ করে পুঁজিবাজারে ‘ব্লক মার্কেট’ বেশ সরব হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দিন ধরে এ মার্কেটে লেনদেন বেড়ে গেছে। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকরা সুবিধাভোগী ব্যবসায় ক্রমাগত জড়িয়ে পড়ছেন। নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেনের মধ্যদিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ওই শেয়ারটিতে আকৃষ্ট করছে নতুন বিনিয়োগে।

তেমনি বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নিজেদের মধ্যে শেয়ারের হাতবদল করছে। জুন মাসে আর্থিক বছর শেষে প্রতিষ্ঠানের ফান্ডের আয় বা মুনাফা বাড়িয়ে দেখাতে এ কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির পরিচালকরা সাম্প্রতিক সময়ে অশুভ এ প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন বলে অনেক বিনিয়োগকারী অভিযোগ করছেন। বিনিয়োগাকরীদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কারসাজির হাতিয়ার হয় উঠেছে ‘ব্লক মার্কেট’।

তেমনি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা তথ্য গোপন করেই ব্লক মার্কেটে শেয়ার লেনদেন করছেন। তাও আবার কেনা-বেনা হচ্ছে সাধারণ মার্কেটের বাজার দরের কখনো নিচে, আবার কখনো উপরে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তা পরিচালকরা অনেক সময় রাজস্ব ফাঁকি দিতে কম মূল্যে শেয়ার হস্তান্তর করছে। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ব্লক মার্কেটে শেয়ার লেনদেনের পূর্বে তাদের ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা মানছে না। সাধারণ বাজারের চেয়ে ব্লক মার্কেটের মধ্যে তফাত হলো, ব্লক মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। এমনকি ক্রেতা-বিক্রেতা মিলে শেয়ারের দামও আগে থেকে ঠিক করে নেন।

হঠাৎ করে ব্লক মার্কেটে লেনদেন বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নিজেদের মধ্যে শেয়ারের হাতবদল করছে। জুন মাসে আর্থিক বছর শেষে প্রতিষ্ঠানের ফান্ডের আয় বা মুনাফা বাড়িয়ে দেখাতে এ কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয় জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, জুন মাসে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর আর্থিক বছর শেষ হবে। বছর শেষে যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো আয় ও মুনাফা দেখাতে পারে, সে জন্য নিজেদের মধ্যে শেয়ারের হাতবদল করে থাকে। অতীতে দেখেছি এক মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার অন্য মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে লেনদেন করা হয়। ক্রেতা-বিক্রেতা দুই ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান থাকে একই।

শাকিল রিজভী বলেন, সাধারণত ব্লক মার্কেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ থাকে না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই এ মার্কেটে বেশি লেনদেন করে থাকে। জুন মাস ও ঈদের ছুটি মিলিয়ে আর মাত্র দুই দিন লেনদেন বাকি। এ কারণে শেষ দিকে এসে ব্লক মার্কেটে লেনদেন বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ১০টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ২০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, কোম্পানিগুলোর ৫৮ লাখ ১৩১টি শেয়ার ৩২ বার হাত বদল হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর ২০ কোটি ২৪ লাখ ২৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৬ কোটি ১১ লাখ ৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ কোটি ২৯ লাখ ১৫ হাজার টাকার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৪১ লাখ ৫২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ভিএফএস থ্রেড ডাইংয়ের।

এছাড়া আমান ফিডের ২ কোটি ২১ লাখ টাকার, বেক্সিমকো ফার্মার ৩৯ লাখ ১৫ হাজার টাকার, যমুনা ব্যাংকের ৯১ লাখ ১১ হাজার টাকার, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকার, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ৪২ লাখ ৪৬ হাজার টাকার, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের ৩৫ লাখ ৩১ হাজার টাকার এবং আরএন স্পিনিংয়ের ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।