দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে হীরার সঙ্গে তুলনা করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে হীরার টুকরা। হীরা যত কাটা হয়, তত বেশি উজ্জ্বল হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগের ওপর অনেক আঘাত এসেছে।

যত বেশি আঘাত এসেছে, আওয়ামী লীগ তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের মানুষের জন্য কর্তব্যবোধ, দায়িত্ববোধ, ভালোবাসা, ত্যাগ-তিতিক্ষা। এসব আছে জন্যই আওয়ামী লীগ ৭০ বছর ধরে টিকে আছে।’ সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তানিরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে জানা যায়, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। দিনের পর দিন তিনি কারাগারে অত্যাচার সহ্য করতে পারেননি। অত্যাচার-নির্যাতনে তিনি কীভাবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন।’

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা ভাসানীর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী আমাদের দল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সত্য, কিন্তু তার যদি কখনো কিছু প্রয়োজন হতো সঙ্গে সঙ্গে চিঠি লিখত। বঙ্গবন্ধু কোনোদিন কোনোকিছু মনে করতেন না। সঙ্গে সঙ্গে তার যা কিছু প্রয়োজন তাকে পাঠাতেন।

আমি ফিরে আসার পরও তার স্ত্রীকে যতদিন বেঁচেছিলেন যা লেগেছে, আমি সবরকমের সহযোগিতা করেছি। চলে গেছে ঠিকই কিন্তু তিনি তো আমাদের ইতিহাসের একটা অংশ, যে দলেই যাক না কেন।’

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় কোথায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘরবাড়ি ছিল, তা খুঁজে খুঁজে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পরও অত্যাচার-নির্যাতন থেমে থাকেনি। ১৯৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর আবারও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন নেমে আসে। তবে শত অত্যাচার-নির্যাতনেও আওয়ামী লীগ কখনো ভেঙে পড়েনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলা স্বাধীনতা হারিয়েছিল। নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হয়েছিলেন মীরজাফরের ষড়যন্ত্রে। এই মীরজাফর তো গালিতেই পরিণত হয়েছে। এরপর দুইশ বছর ব্রিটিশ বেনিয়ারা শাসন করেছে এই ভূখণ্ড। দুইশ বছর পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই দুইশ বছর আগে হারিয়ে ফেলা স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতাকে আওয়ামী লীগই আবার ফিরিয়ে এনেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সঙ্গে বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের ইতিহাস জড়িত। বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী ঘুরে এ সংগঠনকে দাঁড় করান এবং বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মঞ্চে উজ্জীবিত করেন।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত ও উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ।

যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, মহানগর কমিটি, সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।