দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য ৪টি চুড়ান্ত প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজারকে গুরুত্ব দিয়ে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি উন্নয়নে করণীয় সবই সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়ন করা হবে বলে বলা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের জন্য শেয়ারবাজারে যেসব প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে তা নিম্নরূপ:

স্টক লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্টক লভ্যাংশ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই ক্যাশ লভ্যাংশ প্রদানে উৎসাহিত করতে স্টক লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ করারোপ করা হবে।

বাজেটে এ সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে, কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীগণ কোম্পানি থেকে ক্যাশ লভ্যাংশ প্রাপ্তির প্রত্যাশা করেন। সে বিবেচনায় ক্যাশ লভ্যাংশ প্রদান পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজার শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ক্যাশ লভ্যাংশের পরিবর্তে স্টক লভ্যাংশ তথা বোনাস শেয়ার বিতরণের প্রবণতা কোম্পানিসমূহের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।

এতে বিনিয়োগকারীগণ তাদের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্টক লভ্যাংশের পরিবর্তে ক্যাশ লভ্যাংশ প্রদানকে উৎসাহিত করার জন্য কোনো কোম্পানি স্টক লভ্যাংশ প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে উক্ত স্টক লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান করতে হবে। উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত বাজেটে স্টক লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ ট্যাক্সারোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল।

পরিশোধিত মূলধনের ৭০ শতাংশের বেশি রিটেইনড আর্নিংস, রিজার্ভের ওপর ১০% ট্যাক্সারোপ: কোম্পানির অর্জিত মুনাফা থেকে শেয়ার হোল্ডারগণ তথা বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ দেওয়ার পরিবর্তে রিটেইনড আর্নিংস বা বিভিন্ন ধরণের রিজার্ভ হিসাবে রেখে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

এতে প্রত্যাশিত লভ্যাংশ প্রাপ্তি থেকে বিনিয়োগকারীগণ বঞ্চিত হচ্ছেন এবং পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ ধরণের প্রবণতা রোধে করা প্রয়োজন। এজন্য কোনো কোম্পানির কোনো আয় বছরে রিটেইনড আর্নিংস, রিজার্ভ ইত্যাদি সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৭০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে যতটুকু বেশি হবে তার ওপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ১০ শতাংশ কর প্রদানের বিধান করা হয়েছে।

অর্থাৎ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি, কোনো অর্থবছরে কর পরবর্তী নিট লাভের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিংস ফান্ড, রিজার্ভ সারপ্লাস ইত্যাদিতে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থাৎ কোম্পানিকে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ষ্টক ও ক্যাশ দিতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি এভাবে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রতিবছর রিটেইন আর্নিংস ফান্ড, রিজার্ভ, সারপ্লাস এ স্থানান্তরিত মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।

লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত সীমা ৫০ হাজার টাকা: ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত সীমা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী তথা সামগ্রিক পুঁজিবাজার উন্নয়নে এই করমুক্ত আয়ের সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। অর্থাৎ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ আয় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কোনো ট্যাক্স দিতে হবে না আগে যা ছিলো ২৫ হাজার টাকা।

অনিবাসী কোম্পানির লভ্যাংশ আয়ের ওপরও দ্বৈতকর প্রত্যাহার: গেল বছরের বাজেটে দেশিও বা নিবাসী কোম্পানির লভ্যাংশ আয়ের ওপর দ্বৈতকর প্রত্যাহার করা হয়েছে। এবারের বাজেটে (২০১৯-২০২০) বহুজাতিক কোম্পানি বা অনিবাসী কোম্পানির লভ্যাংশ আয়ের ওপরও দ্বৈতকর প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের উৎসাহী করার জন্য এ বছর নিবাসী ও অনিবাসী সকল কোম্পানির ক্ষেত্রে লভ্যাংশ আয়ের ওপর একাধিকবার করারোপন (Multi layer Taxation on Dividend) রোধ করার বিধান করা হয়েছে।