মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট গত রোববার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। চূড়ান্ত বাজেটে কিছু কাটছাঁট দিয়ে পুঁজিবাজার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। পুঁজিবাজার যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই জন্য কোম্পানি মালিক, বিনিয়োগকারী সবার স্বার্থের কথা ভেবে এমনটি করা হয়েছে।

তবে প্রণোদনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, প্রণোদনায় কিছুটা কাটছাঁট করা হলেও এটা পুঁজিবাজার বান্ধব হয়েছে। তবে রিটেইন আর্নিংস ও বোনাস শেয়ারে সংশোধিত কর আরোপের প্রস্তাব ইতিবাচক হলেও এর উত্তাপ নেই পুঁজিবাজারে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য সংশোধিত প্রস্তাব যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ কর হার কার্যকর হলে, কোম্পানিগুলোর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। এতে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। কেননা বেশিরভাগ ভাল কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বোনাস লভ্যাংশ দেয় না বললেই চলে। যেগুলোর মৌলভিত্তি তুলনামূলক দূর্বল, সেগুলোর বোনাস শেয়ার দেওয়ার প্রবণতা বেশি।

কোম্পানির প্রবৃদ্ধি নেই, ব্যবসার জন্য দরকার নেই, তারপরেও বোনাস শেয়ার দেয়। সংশোধিত প্রস্তাবে এ প্রবণতা কমবে। সবমিলিয়ে এ প্রস্তাব বিনিয়োগকারী বান্ধব অর্থাৎ পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা হয়ত এর প্রভাব এখনো বুঝতে পারেননি। যে কারণে তারা কিছুটা দ্বিধা দ্ব›েদ্ব রয়েছেন। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গত রোববারের পুঁজিবাজারে। তবে পরিস্থিতি বুঝতে পারলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয় নিয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান দৈনিক দেশ বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রী এই প্রণোদনা দিয়েছেন। এই প্রণোদনার মাধ্যমে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। কোম্পানি থেকে বোনাস লভ্যাংশের নামে কাগজ ধরিয়ে দেবেন তা চলবে না। অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা পুঁজিবাজারে এসে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে মগ্ন থাকেন। তারা সবসময় বোনাস লভ্যাংশ দিতে চান। এবার প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনা দিয়েছেন তাতে এসব বন্ধ হবে। এই প্রণোদনা পুঁজিবাজারের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।

একই প্রসঙ্গে ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেছেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সংশোধিত প্রস্তাব যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রণোদনা কার্যকর হলে কোম্পানিগুলোর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। এতে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ ভালো কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বোনাস লভ্যাংশ দেয় না বললেই চলে। যেগুলোর মৌলভিত্তি তুলনামূলক দুর্বল, সেগুলোর বোনাস শেয়ার দেওয়ার প্রবণতা বেশি। সংশোধিত প্রস্তাবে এই প্রবণতা কমবে।

তবে এর আগে সংরক্ষিত আয়ে কর প্রস্তাব বিবেচনা নিয়ে সবার আগে দাবি তোলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন। চূড়ান্ত বাজেটে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করায় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। সরকারের এই ভূমিকা পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছিল, কোনো কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ দিলে ওই লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে। চূড়ান্ত বাজেটে এখানে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনায় কোনো কোম্পানি যদি নগদের থেকে বেশি বোনাস লভ্যাংশ দেয় তাহলে ঘোষিত লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ কর দিতে হবে।

পাশাপাশি কোনো প্রতিষ্ঠান যদি নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে শুধু বোনাস লভ্যাংশ দেয় তা হলেও ওই কোম্পানিকে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করতে হবে। পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলোর মধ্যে বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান উৎসাহিত করতে স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১০ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে।