দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: হিসাব বছর শেষ হওয়ায় মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের। প্রকৃত বিনিয়োগের তুলনায় লভ্যাংশ আয়ের হার বেশি হওয়ার সম্ভাবনায় খাতটির প্রতি চাহিদা বেড়েছে। আর এতেই গত দুই সপ্তাহে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। চাহিদা বাড়ায় কোনো কোনো মিউচুয়াল ফান্ড সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমায় কেনাবেচা হচ্ছে। পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।

বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৭টি মেয়াদি (ক্লোজ এন্ড) মিউচুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতার কারণে আয় কমে যাওয়ায় বর্তমানে ৩০টি মিউচুয়াল ফান্ড অভিহিত মূল্যের নিচে কেনাবেচা হচ্ছে। এর মধ্যে ৯টি মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হচ্ছে অভিহিত মূল্যের অর্ধের দরে। তবে প্রকৃত বিনিয়োগের তুলনায় প্রকৃত লভ্যাংশের হার আকর্ষণীয় হওয়ার সম্ভাবনায় গত দুই সপ্তাহ ধরে মিউচুয়াল ফান্ডের চাহিদা বাড়ায় দর বাড়ছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের ২০ জুন পর্যন্ত ডিএসইতে মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন ছিল ৩ হাজার ৪৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরের সপ্তাহে খাতটির বাজার মূলধন বাড়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। আর গত সপ্তাহে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের দর বাড়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত দুই সপ্তাহে খাতটির বাজার মূলধন বেড়েছে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর চলতি বছর এ খাতটির বাজার মূলধন বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ নিয়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) বারবার নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করায় খাতটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থাহীনতা রয়েছে।

২০১৮ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চাপে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছরের পরিবর্তে ২০ বছর করায় খাতটির প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ খাতটির বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না থাকার কারণে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন নেমে আসে ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকায়। তবে লভ্যাংশ ঘোষণার সময় আসায় চলতি জুন মাসের শেষার্ধ থেকে দর বাড়তে দেখা যায়, যা ৪ জুলাই শেষে ৩ হাজার ৮৯৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকায় উন্নীত হয়।

ফান্ডগুলোর দর বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানান, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির থেকে বলা হয়েছে, কোনো মিউচুয়াল ফান্ড লভ্যাংশ আকারে রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট (বোনাস) দিতে পারবে না। ফান্ডগুলোর বাজারদর কম হওয়ায় ফান্ডগুলো যে হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করবে, প্রকৃত বিনিয়োগের তুলনায় লভ্যাংশ আয়ের হার বেশি ও আকর্ষণীয় হবে এমন ধারণায় ফান্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের আকার হচ্ছে ৬ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত ১০টি মিউচুয়াল ফান্ডের আকার হচ্ছে ৩ হাজার ১৫৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের আকার হচ্ছে ৯৭২ কোটি টাকা।

আর রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির সাবসিডিয়ারি আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি পরিচালিত ৯টি মিউচুয়াল ফান্ডের আকার হচ্ছে ৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। অবশিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করছে এইমস, ব্যানগার্ড, এসইএমএল, ভিআইপিবি, সিএপিএম ও এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্স (বিডি) লিমিটেড।

সম্পদ ব্যবস্থাপকদের অদক্ষতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কারণে গত ৪ জুলাই শেষে তালিকাভুক্ত সবগুলো মিউচুয়াল ফান্ডের আকার দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকায়, যা মোট আকারের তুলনায় ৩৬ শতাংশ কম। চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের নিট মুনাফা হয়েছে ২১১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অবশ্য এ মুনাফার ২৮ শতাংশই যাবে ফান্ড পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের পকেটে।