দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে অব্যাহত বড় দরপতন পিছু ছাড়ছে না। নীরবে রক্তক্ষরণ চলছে পুঁজিবাজারে। ফলে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে দেশের পুঁজিবাজার। টানা ১৪ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ১৩ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা উধাও। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন পুঁজিবাজার দরপতনের শেষ কোথায়, আর কত প্রণোদণা দরকার। এ কথা এখন ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে।

টানা পতনে একটু একটু করে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ক্ষোভ আর পুঁজি হারানোর প্রতিবাদে আবারও মতিঝিলেররাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে আজ (সোমবার) দুপুরে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় একশ’ পয়েন্টে পড়ে গেলে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা ডিএসই থেকে বের হয়ে মতিঝিলের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

বিক্ষোভ মিছিল থেকে তারা পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা বলেন, ‘খায়রুল তুই রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’। ডিএসইর উদ্দেশ্যে তারা বলেন ‘ডিএসইর গদিতে আগুন জ্বালো এক সাথে’।

আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে মানববন্ধনে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

বিক্ষোভে বিনিয়োগকারীরা বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে পতন অব্যাহত রয়েছে। তবে আমরা এখনও আশা রাখি বাজারের নীতি নিয়ন্ত্রক সংস্থায় কর্তব্যরতরা যদি কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় তাহলে এই দুর্দশা দূর হবে। আর যদি তারা এমন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ঘেরাও করব।

আমাদের দাবি, বাজারকে গতিশীল রাখার জন্যই যেহেতু তাদের দায়িত্বে রাখা হয়েছে, হয় তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুক না হয় নির্দ্বিধায় পদত্যাগ করুক। পুঁজিবাজার দ্রুত স্থিতিশীল না হলে কঠোর কর্মসূচীর হুঙ্কার দিয়েছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিনিয়োগকারী বলেন, বর্তমান বাজারের নীতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকজন দুর্নীতিগ্রস্ত। এমন অবস্থায় যদি নীতি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ঢেলে নতুন করে সাজানো হয় তাহলেই কেবল বাজারের উন্নতি সম্ভব। তাছাড়া বিকল্প কিছু আমি দেখছি না। চলমান দুরাবস্থা কাটাতে বাজার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতদের ইস্যুয়ার কোম্পানিবান্ধব নয়, বিনিয়োগবান্ধব হতে হবে।

এসময় আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, সত্যিকার অর্থে যদি বিএসইসি শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতায় কাজ করতো তবে এতো দিন শেয়ারবাজারে স্থিরতা চলে আসতো। বাজারের এই দুর্দশা ফেরাতে চলমান অস্থিরতা দূর করতে আবারও বিএসইসির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

বিক্ষোভে বিনিয়োগকারীরা বলেন, আমরা বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে বাঁচান। আপনি ছাড়া আমাদের আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আজ ২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ডিএসইর সামনে বিক্ষোভ করেছে শেয়ারবাজারের সাধারন বিনিয়োগকারীরা। ‘শেয়ারবাজার পড়ছে কেন, জবাব চাই দিতে হবে’ এমন স্লোগান নিয়ে ডিএসই থেকে শাপলা চত্বর প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভকারীরা।

চলমান আন্দোলনের মধ্যে আজকে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারীর উপস্থিতি দেখা গেছে। সম্পদ হারিয়ে তাদের চোখে মুখে রাগ আর ক্ষোভের ছায়া। রাস্তায় এরুপ জনস্রোত তৈরিকারী বিনিয়োগকারীদের দাবি শীঘ্রই পূরন না করা হলে আরও ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সাধারন পথচারীরা।

বিনিয়োগকারীদের দাবি: * জেড ক্যাটাগরি এবং ওটিসি মার্কেট বন্ধ
* ইস্যু মূল্যের নিচে অবস্থানরত কোম্পানিগুলোকে ইস্যু মূল্যে বাইব্যাক
* আইপিও এবং প্লেসমেন্ট শেয়ারের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ
* তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে নূন্যতম ১০ শতাংশ লভ্যাংশ বাধ্যতামূলক
* খন্দকার ইব্রাহীম খালেদের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা
* বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের পদত্যাগ