দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে চলে দরপতন। কিন্তু নিয়মিত পতন বা উত্থান উভয়ই স্বাভাবিক নয়। সম্প্রতিক সময়ের দর পতনকেও স্বাভাবিক বলছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে, সোমবারের পুঁজিবাজারের বড় দর পতন ত্বরান্বিত করেছে টেলিকমিউনিকেশন খাতের গ্রামীণফোন ও আর্থিক খাতের পিপলস লিজিংয়ের কেলেঙ্কারির কারনে আর্থিক খাতের শেয়ারে ধ্বস নামা। অধিকাংশ আর্থিক খাতের শেয়ারে ক্রেতা শুণ্য দেখা যায়। যার প্রভাবে পড়ছে সূচকে।

তবে নতুন বাজেটে পুঁজিবাজারে জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সবার প্রত্যাশা ছিল বাজেট পাসের পর বাজার ভালো হবে। কিন্তু সেটা না হয়ে উল্টো বাজারে দরপতন চলছেই। পুঁজিবাজার দরপতনের কারন হচ্ছে, গ্রামীণফোন এবং পিপলস লিজিংয়ের শেয়ারের দর অস্বাভাবিক কমে যাওয়া ইসু্যতে আর্থিক খাতে ঝড় বইয়ে যাওয়া।

কারন গ্রামীণফোনের শেয়ারের দামের কিন্তু একটা বড় প্রভাব আছে আমাদের পুঁজিবাজারের সূচকের ওপর। এই শেয়ারের দাম কমে গেলে সূচক বড়ভাবে কমে যায়। আর বাড়লে বেশ বেড়ে যায়। উদাহরণ দিয়ে বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দর ছিল ৪১০ টাকা। এখন তা ৩৩০ টাকায় নেমে এসেছে। এ সময়ে ৭০ টাকা দর হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর একটা বড় প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর কাছে টাকা নেই।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৬ কার্যদিবস যাবত ধারাবাহিক দর পতনে ভুগছে পুঁজিবাজার। কিন্তু সোমবার পুঁজিবাজারের দর পতনের গতি আরো বেড়ে যায়। দিনশেষে ডিএসই’র সার্বিক মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৮৮.০১ পয়েন্ট। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে স্থিতি পেয়েছে ডিএসই’র সার্বিক মূল্যসূচক।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রামীণফোন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অর্ধবর্ষ শেষে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৯০ শতাংশ অন্তবর্তীকালী ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে গ্রামীণফোন। অর্থাৎ কোম্পানিটি প্রতিটি ১০ টাকার শেয়ারে ৯ টাকা নগদ ডিভিডেন্ড পাবে বিনিয়োগকারীরা। এসময় কোম্পানিটি কর পরবর্তী মুনাফার ৬৭ শতাংশ বন্টন করবে।

কিন্তু আগের বছরের একই সময় অর্থাৎ ২০১৭-১৮ সালের অর্ধবর্ষ শেষে কোম্পানিটি ১২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করেছিল। অর্থাৎ ওই সময় কোম্পানিটি তাদের মুনাফার ৯৮ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। হঠাৎ ডিভিডেন্ড কমায় সোমবার বড় দর পতনে ভুগেছে টেলিকমিউনিকেশন খাতের কোম্পানিটি।

দিনশেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৫.৮৬ শতাংশ বা ২০.২ টাকা। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার বিগত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৩২২.৮০ টাকায় নেমে এসেছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ৩২২.৮ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৪৪.৮০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। দিনশেষে কোম্পানিটির সমাপনী শেয়ার দর ছিল ৩২৪.৪০ টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, সোমবার গ্রামীণফোনের শেয়ারের বিক্রয় চাপ ও দর পতনে সূচক কমেছে ৪৩.৩৬ পয়েন্ট। এদিকে, বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর দর পতনে সূচক কমেছে ৫.৫৯ পয়েন্ট। বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের ইউনাইটেড পাওয়ারের দর পতনে সূচক কমেছে ৪.৮৪ পয়েন্ট।

বাজার সংশ্নিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিনের নানা সংকটের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের অবসায়ন এবং লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্ত দরপতনকে উস্কে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির অবসায়নের খবর প্রকাশের পর গত বৃহস্পতিবার ডিএসই শেয়ারটির লেনদেন স্থগিত করে। এই স্থগিতের আগে সর্বশেষ চার কার্যদিবসে শেয়ারটির দর চার টাকা থেকে দুই টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছিল।