দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে টানাপোড়েনের পর অবশেষে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিতে যাচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে ডিএসইর পর্ষদ।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে উত্থাপিত নানা অসংগতির সুরাহা না হলেও তালিকাভুক্তির জন্য নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসই। যদিও গত ২৩ মে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) কপারটেককে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয়।

এদিকে কোম্পানি তালিকাভুক্তির বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার থাকলেও তা না করে পরিচালনা পর্ষদের দ্বারস্থ হওয়ায় ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমানের এমডি পদে চুক্তির মেয়াদ না বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। ডিএসইর পর্ষদ তার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে বিএসইসির কাছে অনুমতি চাইলেও তা এখনো মেলেনি। গত বৃহস্পতিবার মাজেদুর রহমানের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে।

বর্তমানে ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল মতিন পাটওয়ারী ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। কপারটেকের আর্থিক অসংগতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কোম্পানিটির তালিকাভুক্তি আটকে দেয় ডিএসই। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মূলধন উত্তোলনের পর তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় থাকা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রসপেক্টাসে দেওয়া আর্থিক তথ্য পুনরায় পর্যালোচনা করে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

পরবর্তী সময়ে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক বিবরণীর তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সনদধারী হিসাববিদদের সংগঠন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশকে (আইসিএবি) নির্দেশ দেয় ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)। এই পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র চাইলেও আইসিএবিকে তা দেয়নি কপারটেকের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ অ্যান্ড আকতার। এ কারণে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পেশাগত সনদ নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয় আইসিএবি।

তবে এখনো কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের নানা অসঙ্গতি নিয়ে বিতর্কের অবসান হয়নি। এমন পরিস্থিতিতেই কোম্পানিটি ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে। ১১ জুলাই ডিএসইর পর্ষদ কপারটেককে তালিকাভুক্ত করতে ব্যবস্থাপনা বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেয়। এর আগে ২ জুলাই এসইসির পরামর্শে কপারটেকের আইপিওর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের চাঁদার অর্থ কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে জমার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই পর্ষদ।

এদিকে নির্ধারিত সময়ে কপারটেককে তালিকাভুক্তি করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিএসইসির কাছে সময় চেয়েছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। তবে এসইসি এখনো তাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের রেগুলেশন অনুযায়ী, এই কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির সর্বশেষ দিন ছিল ২৬ মে। আর প্রসপেক্টাসে এসইসির সম্মতিপত্র অনুযায়ী তালিকাভুক্তির সর্বশেষ দিন ছিল গত ২৩ জুন। চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত এই কোম্পানির শেয়ার পেতে চাঁদাগ্রহণ (সাবস্ক্রিপশন) সম্পন্ন হয়।

এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মতিন পাটওয়ারী দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কপারটেকের তালিকভুক্তির প্রক্রিয়া নির্ধারণে বিষয়টি রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে মতামত পাওয়ার পরই কীভাবে তালিকাভুক্তি হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

১১ জুলাই ডিএসই পর্ষদ সভার মিনিটসে উল্লেখ করা হয় যে, আর্থিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন অসংগতির কারণে কপারটেক ইস্যুতে এসইসির পরামর্শ চেয়ে পাঠায় ডিএসই বোর্ড। কিন্তু বিএসইসি থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ সময় এফআরসি ও আইসিএবিও কপারটেক ইস্যুর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। এ কারণে ডিএসই কপারটেককে তালিকাভুক্তিতে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ওই সভায় আরও আলোচনা হয় যে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত নিতে স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দেওয়া আছে। তবে এরপরও এ বিষয়ে বোর্ডের নির্দেশনা চেয়েছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আর এ কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে এসইসির নির্দেশনা চেয়েছে ডিএসইর পর্ষদ। তবে এ বিষয়ে বিএসইসির কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ অবস্থায় ডিএসইর ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রয়োজনীয় বিধি ও রেগুলেশন অনুসারে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে বলে পর্ষদ অভিমত ব্যক্ত করে। এ ক্ষেত্রে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ নোটসহ বিবেচনায় নেওয়ার কথাও জানায় তারা।

কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন অসংগতির বিষয়ে বিশেষ নিরীক্ষার জন্য বিএসইসিকে অনুরোধ করার কথাও জানায় ডিএসই বোর্ড। এছাড়া আইপিও অনুমোদনে ডিএসইর সম্পৃক্ত থাকার প্রক্রিয়াও পর্যালোচনার অনুরোধ জানাবে ডিএসই।