দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঐক্যের সুর বাজতে শুরু করেছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে। বিরোধ কমাতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদকে করা হচ্ছে বিরোধীদলীয় নেতা। এ ছাড়া রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব, আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ করা হচ্ছে।

ছিটকে পড়তে পারেন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। দলের ভাঙন ঠেকানো, বিরোধ মেটানো এবং এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টিকে আরো শক্তিশালী করতে যুগান্তকারী এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, দুদিন যাবত জিএম কাদেরপন্থি ও রওশনপন্থিদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। ঘরোয়া এসব বৈঠকে বিরোধ নিরসনের আশানুুরূপ ফল পাওয়া গেছে। তার একদিন পরেই দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীর জাপা চেয়ারম্যান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, এখন থেকে জিএম কাদেরকে আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলা যাবে না। কারণ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। আপনারা জানেন এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থায় ২০-এর ১/ক ধারা অনুযায়ী উনার অবর্তমানে জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করে গেছেন।

এ সময় পার্টির প্রেসিডিয়ামসহ পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন। ঘোষণার পর জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো দ্ব›দ্ব-মতভেদ ও বিভেদ নেই। জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ। বিরোধী দলের নেতা কে হবেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্টির ফোরামে বসে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন করা হবে।

বিষয়টি অনেকটা স্পিকারের ওপর নির্ভরশীল, তবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সুপারিশ দেয়া হবে। রংপুরের উপ-নির্বাচন প্রশ্নে জিএম কাদের বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বোর্ড গঠন চ‚ড়ান্ত করবে প্রার্থী।

সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমৃত্যু দলটির চেয়ারম্যান ছিলেন। রোববার তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান। ৪ মে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।

এদিকে জাপার রওশনপন্থি ও কাদেরপন্থি নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে বৈঠক হয়। দীর্ঘ বৈঠকে দেবর-ভাবি দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ও ভাঙন ঠেকাতে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। দুই নেতার সিদ্ধান্তক্রমে দলে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে।

রওশনের একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি বলেন, দল নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন থাকবে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো পক্ষই দল ভাঙতে চাচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রওশনের এক ঘনিষ্ঠ বলেন, বিরোধীদলীয় উপনেতা থেকে বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন বেগম রওশন এরশাদ।

পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে বাদ দিয়ে সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে করা হচ্ছে মহাসচিব। এ ছাড়া মহাসচিবের তালিকা আরো নাম রয়েছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও গোলাম কিবরিয়া টিপুর নাম। সংসদের চিফ হুইপ করা হচ্ছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে।

অতিরিক্ত মহাসচিব করা হচ্ছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি ও শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে। এ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টি চলবে এমনটি জানিয়েছে দলের একজন মুখপাত্র। তিনি বলেন, দলের আর কোনো বিরোধ ও দ্বিধাদ্ব›দ্ব থাকবে না।

সংসদে প্রধান বিরোধী দলের তকমা থাকলেও জাতীয় পার্টি এখনো রয়ে গেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে। এ নিয়ে দলেই নানা সমালোচনার মুখে দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা কদিন আগে মহাজোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে এরশাদের মৃত্যুর পর এখন জাতীয় পার্টির হাল কে ধরবেন, কীভাবে এ দল পরিচালিত হবে- সেসব প্রশ্ন ঘুরছে অনেকের মনে।

ডাকসুর সাবেক জিএস ও বাংলাদেশের জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, এরশাদহীন জাতীয় পার্টি টিকবে কিনা- সে বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। তিনি বলেন, এর জন্য ওয়েট করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ধারা রয়েছে। সে ধারাগুলো নিয়ে কী করবে তারা- এখনো বলা যাচ্ছে না।

জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, জাতীয় পার্টি এক থাকবে। বিভক্তি হওয়ার প্রশ্নে আসবে না। আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবে জাপা।