দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশলী খাতের কোম্পানি এটলাস বাংলাদেশ বছরে ২ লাখ সিলিং ফ্যান উৎপাদন করতে চায়। এজন্য টঙ্গীতে অবস্থিত এটলাসের নিজস্ব জমির ওপর একটি কারখানা স্থাপন হবে। কারখানায় উৎপাদিত ফ্যান হবে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও টেকসই। ‘এটলাস ক্লাসিক ও এটলাস সুপার’ নামে দুই মডেলের ফ্যানের প্রতিটির বাজারমূল্য ধরা হবে ৩ হাজার ১০০ ও ২ হাজার ৮৫০ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনে এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। কিন্তু কমিশন বলছে, এই মূল্যে বাজারে ফ্যান ছেড়ে বাজার ধরা কঠিন হবে। কারণ বাজারে আরও কম দামে আধুনিক প্রযুক্তির ফ্যান পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানের অধীনে অন্যান্য অলাভজনক কারখানার মতো এটিও লোকসানী খাতায় নাম লেখাতে পারে। ফলে সরকারি অর্থের অপচয়ের ঝুঁকি রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) থেকে জানা গেছে, সরকারিভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেল সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব মোটরসাইকেলের পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেকসই ফ্যান উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পারলে পণ্যটিকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।

এছাড়া গ্রীষ্মকালীন সময়ে ফ্যানের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। এজন্য ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে টঙ্গীর এটলাসের নিজস্ব জমির ওপর একটি কারখানা স্থাপন করা হবে। এজন্য ‘বিদ্যুৎসাশ্রয়ী টেকসই সিলিং ফ্যান উৎপাদন’ শীর্ষক প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে।

এতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি বাস্তবায়নকারী সংস্থা সাড়ে ৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এই সিলিং ফ্যান কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৫ লাখ। কিন্তু প্রাথমিকভাবে উৎপাদন করা হবে ২ লাখ। এর মধ্যে এটলাস ক্লাসিক মডেল হবে ১ লাখ ২৫ হাজার এবং এটলাস সুপার মডেলের হবে ৭৫ হাজার। এই ফ্যান উৎপাদন করে বাজার ধরতে পারলে এটলাসকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়া যাবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম ইনামুল হোসেন বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেই সিলিং ফ্যানের বার্ষিক চাহিদা দেড় লাখ। এটা ধরতে পারলেও এই প্রকল্প লাভবান করা সম্ভব। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত কারখানায় উৎপাদিত ফ্যান হবে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও টেকসই। এজন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পটির মূল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড (এবিএল) দেশে মোটরসাইকেল আমদানি ও বিক্রি করে আসছে। বর্তমানে এটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে এবিএল বলছে সরকারি নীতি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে লাভবান করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে নতুন করে নেওয়া এই ফ্যানে কারখানা কতটুকু যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।

পরিকল্পপনা কমিশন আরও বলছে, ১৯৭২ সালের প্রতিষ্ঠিত এবিএল ১৯৮৭ সালে কোম্পানিতে রূপ নেয়। কিন্তু এত দিনেও প্রতিষ্ঠানটি একটি লাভজন অবস্থায় যেতে পারেনি। এ অবস্থায় নতুন কারখানা স্থাপনের নামে সরকারি এই টাকা অপচয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে এবিএলকে আলোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রকল্পে কীভাবে সাড়ে ৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায়।

প্রস্তাবনার আলোকে পরিকল্পনা কমিশন আরও বলছে, এটলাসের প্রতিটি ফ্যানের যে বাজারমূল্য ধরা হয়েছে তা তুলনামূলক বেশি। কারণ বাজারে ২৪০০-২৫০০ টাকায় ভালো মানের ফ্যান পাওয়া যায়। বেসরকারি কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে যা বাজারে সরবরাহ করছে।

এছাড়া ডিপিপিতে বলা হয়েছে, বাজারে মোট ফ্যানের চাহিদা সাড়ে ৪১ লাখ, আর বিক্রি হয় তার চেয়ে আরও এক লাখ বেশি। তাহলে কীভাবে নতুন কোম্পানি বাজারে নিজের অবস্থান তৈরি করবে তারও ব্যাখ্যা চায় পরিকল্পনা কমিশন।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের যুগ্ম প্রধান কামরুন নাহার বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব নিয়ে শিগগিরই পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় কিছু কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।