দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে আজ সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে সূচকের বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। কাঁপন ধরানো বড় দর পতনের পর একইভাবে বড় উত্থান দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রায় একশ পয়েন্ট কমেছিল।

আজ সপ্তাহের তৃতীয় দিনে প্রায় একশ পয়েন্ট যোগ হয়েছে সূচকে। সোমবারও বাজারে বড় দরপতন হয়েছিল। সে হিসেবে আজ কার্যত বাজার ‘কাম-ব্যাক’ করেছে। আর সেটি হয়েছে রাজকীয় সেঞ্চুরি দিয়ে। তবে বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা পতন কিংবা উত্থান-কোনো পর্যায়েই এমন সেঞ্চুরি চান না। তারা চান বাজারের স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা, যেখানে অস্বাভাবিক উঠা-নামা থাকবে না।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নানামূখী পদক্ষেপে আজ মঙ্গলবার উত্থানে শেষ হয়েছে দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেন।

এর মধ্যে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রণোদনা স্কিমের ৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ছাড়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়ার পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হয়েছে। এতে একদিনেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে ১০০ পয়েন্টের ওপর। দাম বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের।

হঠাৎ এমন উল্লম্ফন হলেও কয়েক মাসে ধরেই শেয়ারবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এমনকি রবি ও সোমবার পরপর দুদিন শেয়ারবাজারে বড় দরপতন ঘটে। ভয়াবহ ওই দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটিও গঠন করে বিএসইসি।

সেই সঙ্গে সোমবার প্রণোদনা স্কিমের ৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ছাড়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বাংলাদেশ ব্যাংক এ অর্থ ছাড় করলে তা বিনিয়োগের জন্য শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট ২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হবে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো অফার লেটার পেয়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংককে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ গ্রহণে আজ শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। যেসব ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সীমা অনুযায়ি বিনিয়োগ করার সক্ষমতা রয়েছে, সেসব ব্যাংককে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য নির্দেশনা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বর্তমানে ২০টিরও বেশি ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। ওই ব্যাংকগুলোর প্রায় ২-৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। এ নিয়ে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। এমন সুখবরে পতনে পড়া বাজার আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

সূচকের হঠাৎ এমন বড় উত্থানের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, আতঙ্কের কারণে গত কয়েক দিন শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এমন দরপতনের কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে প্রণোদনা স্কিমের ৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ছাড়ার জন্য বিএসইসি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও আস্থা বেড়েছে। এ কারণেই বাজারে এমন বড় উত্থান দেখা দিতে পারে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি। দু-একটি কোম্পানি হয় তো খারাপ করেছে। কিন্তু তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি খারাপ নয়। এখানে ভালো ভালো দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানি আছে। পিপলস লিজিংয়ের মতো দু-একটি কোম্পানির জন্য তালিকাভুক্তকে খারাপ বলা যাবে না।

তবে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী ভিন্ন কথা দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, দীর্ঘদিন অস্বাভাবিক দরপতনের পর হঠাৎ করে দেশের দুই পুঁজিবাজারে কৃত্রিমভাবে শেয়ারে দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা কৃত্রিমভাবে নয়, স্বাভাবিক এর উত্থান চাই।‌ পুঁজিবাজারে এখন মেকিং প্লে চলছে। এটা কুচক্রীদের চক্রান্ত। আমরা একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার চাই। কৃত্রিমভাবে নয়, স্বাভাবিক উপায়ে উত্থান চাই।’

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী মজিবুল মিয়া বলেন, গত কয়েক দিন যে হারে দাম কমেছে তাতে একদিনের উত্থানে কিছু হবে না। টানা পতনে ইতোমধ্যে যে লোকসান হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে হলে কমপক্ষে এক মাস শেয়ারবাজার টানা উর্ধ্বমুখী থাকতে হবে।