দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আইন লঙ্ঘন করায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ট্রেকহোল্ডার এম সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ট্রেকহোল্ডার ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজ লিমিটেডের নিবন্ধন সনদ (লাইসেন্স) বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০- এর ১২ ধারা অনুযায়ী, এই দুই ব্রোকারেজ হাউসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গতকাল বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম. খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৬৯৪তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান।

কমিশন সভার বরাত দিয়ে তিনি জানান, এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার এম সিকিউরিটিজের গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাবে ঘাটতি ছিল ৭ কোটি ৪৩ লাখ ২৫ হাজার ৪৮ টাকা। এর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি কমিশন ওই ঘাটতি সমন্বয়ের নির্দেশ দেয়। এ জন্য ১৪ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়।

এরপর দুইবার সময় বৃদ্ধির আবেদন করে এম সিকিউরিটিজ। তবে কমিশন তা নামঞ্জুর করে। এর প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২ জুলাই এম সিকিউরিটিজ চিঠি দিয়ে বিএসইসিকে জানায়, ২৭ জুনের মধ্যে ঘাটতি সমন্বয় করা হয়েছে। এ অবস্থায় ডিএসইকে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার অনুরোধ করে বিএসইসি। ডিএসই বিষয়টি পরীক্ষা করে কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়- এম সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে এখনও ৯৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৯২ টাকা ঘাটতি রয়েছে।

এর মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউজটি ১৯৮৭ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলের ৮(এ)- এর ১ ও ২ ধারা ভঙ্গ করেছে। একই সঙ্গে অসত্য তথ্য দিয়ে ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্সের ১৮ ধারা ভঙ্গ করেছে। এর আগে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি ছিল এবং পরিচালকদের গ্রাহকের সমন্বিত হিসাব থেকে ঋণ দেয়। এই অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ লাখ টাকা এবং দুই পরিচালককে ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। একই অপরাধে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অর্থাৎ এম সিকিউরিটিজ ধারাবাহিকভাবে আইন লঙ্ঘন করছে। এর আগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরও একই রকম অপরাধে সম্পৃক্ত থাকায় গ্রাহকদের সম্পত্তি রক্ষা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০- এর ১২ ধারা অনুযায়ী এম সিকিউরিটিরেজ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে, ২০১৭ সালের ১৮ মার্চ সিএসইর ট্রেকহোল্ডার ফার্স্টলিড সিউরিটিজের সিলেট শাখায় ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮৪০ টাকা। বিভিন্ন সময়ে সিএসইর প্রচেষ্টা সত্তে¡ও এখনও প্রতিষ্ঠানটির পাওনার ২৯ দশমিক ১৫ শতাংশ অপরিশোধিত রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সিএসইর বোর্ড সভায় পাওনা পরিশোধের জন্য চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউজটির অনিয়মের কারণে সিএসই থেকে প্রাপ্য লভ্যাশ এবং সিএসইসির ২০১৩ সালের রেগুলেশন অনুযায়ী পাপ্য ফ্রি লিমিট আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছে বিএসইসি। একই সঙ্গে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ না করলে, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০- এর ১২ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।