দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আগামীতে বীমা ছাড়া কোনো শ্রমিক বিদেশ যেতে পারবে না। বিদেশগামী বাংলাদেশী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে বীমার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সী যেকোনো কর্মীকে বিদেশ যাওয়ার আগে বীমা করতে হবে। বীমার মেয়াদ থাকবে দুই বছর।

প্রাথমিকভাবে সরকারি বীমা কোম্পানি জীবন বীমা করপোরেশনকে এই বীমা করার দায়িত্ব দেয়া হবে। পরে বেসরকারি বীমা কোম্পানিও এই বীমা করতে পারবে। চলতি বছর থেকে এই বীমা কার্যকর করার হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে সব বাংলাদেশী বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করছেন তারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে নানা দুর্ঘটনার কারণে অনেক কর্মী শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন। এদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদেশগামী কর্মীদের বীমা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে।

জানা গেছে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইআরডিএ) সাথে কথা বলে জীবন বীমা করপোরেশন প্রবাসী কর্মীদের জন্য বীমা পরিকল্পনা প্রস্তুত করছে। প্রাথমিকভাবে দুই বছরের জন্য কর্মীদের জন্য বীমা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জীবন বীমা করপোরেশনের ওপর দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের পারফরম্যান্স যাচাই করে পরে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোকেও এ সুযোগ দেয়ার বিষয় বিবেচনা করা যেত।

প্রস্তাবিত নীতিমালায় বীমা প্রস্তাব-বি অনুযায়ী পাঁচ লাখ টাকার বীমার বিপরীতে প্রিমিয়াম দুই হাজার ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে জীবন বীমা করপোরেশন। সে ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের টাকা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কর্মী, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং সরকারের ভর্তুকির মাধ্যমে পরিশোধ করার চিন্তা করা হচ্ছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১৮ সালে মোট সাত লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের উদ্দেশে বিদেশে গেছেন। এ সময় বিদেশে মৃত্যুবরণকারী মোট তিন হাজার ৭৯৩ জন কর্মীর লাশ দেশে ফেরত আসে। এর মধ্যে ৭০০ জন কর্মী বিদেশ গমনের দুই বছরের মধ্যে মারা যান।

এই পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এবং প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক সামর্থ্যকে বিবেচনায় এনে প্রস্তাবিত বীমা পরিকল্পের প্রিমিয়ামের অর্থ পর্যালোচনা করার জন্য জীবন বীমা করপোরেশনকে অনুরোধ করা হয়েছে। স¤প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকে বিদেশগামী কর্মীদের বাধ্যতামূলক বীমার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং অভূতপূর্ব উন্নয়নে আমাদের প্রবাসী কর্মীদের পরিশ্রমলব্ধ রেমিট্যান্সের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিদেশগামী কর্মীদের বাধ্যতামূলক বীমার আওতায় আনার লক্ষ্যে যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা যেন কর্মীবান্ধব হয় অর্থাৎ কর্মীদের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ না পড়ে। তা ছাড়া সবচেয়ে কম প্রিমিয়ামে কর্মীরা কিভাবে সর্বাধিক সুবিধা পেতে পারেন সেদিকে লক্ষ রেখে বীমার প্রিমিয়াম, বীমার অঙ্ক ও প্রাপ্য সুবিধাদি নির্ধারণ করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, প্রবাসী কর্মীদের মানসম্মত বীমা সেবা দেয়া, বীমার দাবি আদায় নিশ্চিত করার জন্য বীমা ব্যবস্থাপনাকে গতিশীল, আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বীমা ব্যবস্থাকে প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে জীবন বীমা করপোরেশনের পাশাপাশি বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বীমা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করা যেতে পারে।

সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা চালু করা বেশ সময়সাপেক্ষ। যত দিন না উভয় মাধ্যমে বীমা ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব না হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত জীবন বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের জীবন বীমা করার চিন্তা করা হচ্ছে।