দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনার প্রফেসর হেলাল উদ্দিন বলেন, বিএসইসির কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি বা নীতি-কৌশলের প্রভাবে বাজারে দর পতন হয়নি। তবু একটি মহল বিএসইসিকে দায়ী করছে। কথিত বিনিয়োগকারীরা মিছিল মিটিং করে বিএসইসিকে দোষারোপ করছে। এর পেছনে কারো কারো সংশ্লিষ্টতা ও ইন্ধন আছে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে যারা পেছন থেকে খেলছেন, তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের শত্রু। বিএসইসি এ বিষয়ে সময়মত যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বাজারের সাম্প্রতিক পতনের বিষয়ে বিএসইসির তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক আলামত পাওয়া গেছে। চূড়ান্তভাবে দোষ প্রমাণিত হলে বিএসইসি কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএসইসির কমিশনার বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। এমনকি গণমাধ্যমও অনেক ভুল করে বসছে। অনেক শিক্ষিত মানুষের ধারণাও পর্যাপ্ত নয়। সম্প্রতি দর পতনের কারণে বাজার মূলধন ২৭ হাজার কোট টাকা কমেছে।

অর্থাৎ সম্মিলিতভাবে বাজারের সব কোম্পানির বাজারমূলধন বা মূল্য ২৭ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এর অর্থ এই নয় যে টাকাগুলো বাজার থেকে বের হয়ে গেছে, পাচার হয়ে গেছে। শেয়ারবাজার থেকে মুদ্রা পাচারের কোনো সুযোগ নেই। কারণ প্রতিটি বিও একাউন্টের সঙ্গে ব্যাংক একাউন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র যুক্ত।

তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজার পরিচালনায় স্টক এক্সচেঞ্জের ম্যানেজমেন্ট চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছিল বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায়, কতিপয় ব্রোকার-ডিলারের স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়। কিন্তু সেটিই হচ্ছে। তাই আমাদেরকে বিকল্পের কথা (নতুন স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা) ভাবতে হচ্ছে। গত দুই মাস ধরে অনেক গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা হচ্ছে এটি।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বাজারে যে মন্দা দেখা যাচ্ছে তার জন্য মোটেও বিএসইসি দায়ী নয়। এর পেছনে থাকা অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ফেরত দেওয়া হচ্ছে না, লুটতরাজ চলছে-এর কোনোটির জন্যই বিএসইসি দায়ী নয়। বাজারের সাময়িক মন্দার পেছনে পিপলস লিজিং এর অবসায়নের ঘটনাও অনেকাংশে দায়ী। কিন্তু এর দায় বিএসইসির নয়। বাজারে বিটিআরসি ও গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্বের ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু এর দায়ও বিএসইসির নয়।

অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেছেন, আমাদেরকে চাকরীর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরী করে এসেছি। তবে সামনের দিনগুলো স্টেকহোল্ডারদের জন্য কঠিন হবে। এটা শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদেরকে বুঝতে হবে। আর সেটা যদি সত্যিকারভাবে আমাদের রেগুলেটর হিসাবে আবির্ভূত হতে হয়, তাহলে হবে দূর্ভাগ্যজনক।

হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, শেয়ারবাজারে ১৯৯৬ ও ২০১০ ধস নামার সুযোগ নেই। সমস্ত পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং শেয়ারবাজারের পেছনে যারা খেলছেন, তারা অর্থনীতির বেগবান চান না। তারা একটি স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনা করতেও ব্যর্থ হচ্ছেন। আপনাদের প্রত্যাশার উদ্দীপক স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনা হচ্ছে না। স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন।

এমন ব্যর্থতার মুখে স্টক এক্সচেঞ্জের এমডিকেও বিদায় নিতে হয়েছে। আমরা ডিমিউচ্যুয়ালাইজড করেছি, স্টক ডিলারদের স্বার্থ রক্ষা করবার জন্য নয়। বোর্ড মিটিংয়ে ব্রোকার ডিলারদের উপর নির্ভর হয়ে যাওয়ার জন্য নয়। ভারপ্রাপ্ত এমডি আছেন, সেগুলো যেনো মনে থাকে।

তিনি বলেন, কমিশন হয়তো আপনাদের মতো রিঅ্যাক্ট করবে না, তবে কমিশন ঠিকই নিজেদের মতো কাজ করবে। আমাদেরকে চাকরীর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরী করে এসেছি। আমরা সংস্কার করতে এসেছি। আমরা সব জায়গায় সংস্কার করেছি। কিন্তু ডিএসই পরিপূর্ণভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য তার ব্যবস্থাপনা গত ৫ বছরে কোন একটি উদ্যোগ কি নিতে পেরেছে। সুতরাং মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। মানুষকে মোটিভেশনাল অ্যাপ্রোচে কাজ করাতে হবে। সেই ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান যদি ডেভোলপ করতে না পারে, তাহলে কমিশনকে বিকল্প উপায় চিন্তা করতে হবে। এবং এটি শুরু হয়েছে।

আমার ব্রোকারস যদি বলে আইপিও রুলস এমন হবে, বিনিয়োগকারী যদি বলে বাই ব্যাক করতে হবে- এগুলো হাস্যকর। বাই ব্যাক যদি করতে হয়, আপনি মাখন নেবেন, আর দাম কমে গেলে কোম্পানিকে বাই ব্যাক করতে হবে। তাহলে তো কল অপশন থাকতে হবে। আমাদের কল অপশন নেই। এছাড়া বাই ব্যাক আইন নেই। এখন এসব যদি মিছিলকারীদের বক্তব্য হয়, শেয়ারবাজারের নীতিনির্ধারক যদি মিছিলকারীরা হয়- তাহলে কেমনে হবে। শেয়ারবাজারে আপনাদের ভূমিকা কি, আপনাদের রোল কি? এগুলো পরিস্কার করতে হবে। জানান এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

নিজামী বলেন, কিছুদিন আগে পত্রিকায় কোন একটি কোম্পানির ফাইন্যান্সের সঙ্গে ডিএসইর মিল নেই বলে অনেক কিছু হয়েছে। আপনারা যদি এতই ফাইন্যান্সিয়াল বুঝেন, তাহলে বিনিয়োগকারীদেরকে রাস্তায় নামতে হয় কেনো? ফেসবুক ১ ডলারে লিস্টেড হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ৩৬ ডলারে হয়। এ নিয়ে সেখানে কেউ মিছিল করেনি। এছাড়া শেয়ারটির দর ২-৩ ডলারে নামলেও মিছিল করেনি।

তিনি বলেন, আমাদের বাচ্চাদের পেছনে অনেকগুলো বই দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের হাতে কোন খাতা নেই। আজকে আমাদের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনাটা এমন। আপনি চাইলেন ইস্যুয়ারকে আউট করে দিয়েছি। আর বিনিয়োগকারীদেরকে রাস্তায় নামিয়েছি। কিন্তু শেয়ার কেনা-বেচা করার জায়গা ব্রোকারেজ হাউজে মিছিল করার কথা। তাহলে লক্ষ্যভ্রষ্ট। এর উদ্দেশ্য কি?