মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিতর্কিত কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন শুরু আগামী ৫ আগস্ট থেকে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) প্রায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই কোম্পানির ট্রেডিং কোড: “”COPPERTECH” ” এবং কোম্পানি কোড: ১৩২৪৭। ক্যাটাগরি হবে ‘এন’। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিতর্কিত আইপিওতে আসা বিশেষ ব্যবস্থায় লেনদেন চালু করা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ার দর নিয়ে ফেসবুকে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা ফেসবুকে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ আবার কোম্পানিটিকে জেড ক্যাটাগরিতে যাওয়ায় আশঙ্কা করেছেন।

কারন ইতিপূর্বে বাজারে আসা কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে আসার পরই উচ্চ দরে লেনদেন শুরু হয়। এর কিছুদিন পরই ওইসব শেয়ার দরে ধস নামে। তাই কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ক্ষেত্রেও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে ঝুঁকিপুর্ণ বলে বাজার বিশ্লেষকরা মতামত দিয়েছেন। তাই অতিরিক্ত দরে এ শেয়ারটি না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও আইপিও আসা পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলোর দাম প্রথম দিকে উল্লফন হলেও এর কয়েক মাস জেতে না শেয়ারের দাম নিচের দিকে নেমে আসে।

তাছাড়া আইনগতভাবে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে তালিকাভুক্ত করার সুযোগ নেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। তাই শর্তসাপেক্ষে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ। সম্প্রতি ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে কপারটেক কোম্পানি যে ডিএসইর চেয়ে শক্তিশালী তার ক্ষমতা দেখাল। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে ডিএসইর প্রতি শেষ আস্থাও হারাল বিনিয়োগকারীরা।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কোম্পানির কাছে যদি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাই পাত্তা না পায় সেই ধরনের সংস্থা দিয়ে কী লাভ? ডিএসই ও বিএসইসি আসলে নামেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আদতে তাদের মেরুদন্ড নেই। কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের তালিকাভুক্তির জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্ত করার সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সময় বাড়ানোর অনুমোদন সাপেক্ষে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসই।

ডিএসই’র তালিকাভুক্তির নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করলে ওই কোম্পানির আইপিও সাবস্ক্রিপশন (আইপিও আবেদন গ্রহণ) শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তালিকাভুক্ত হতে হবে। তবে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ক্ষেত্রে সেই সময় অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পুঁজিবাজার থেকে ২ কোটি শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করার অনুমোদন পায়। এ টাকা উত্তোলনে ৩১ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত কোম্পানিটির আইপিওতে আবেদন গ্রহণ করা হয়।

ফলে চলতি বছরের ২৬ মে’র মধ্যে কোম্পানিটি ডিএসইতে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু ডিএসই পর্ষদ অনুমোদন না দেয়ায় কোম্পানিটির তালিকাভুক্তি আটকে যায়। এরপর ডিএসই’র পর্ষদ কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির জন্য ২৩ জুন পর্যন্ত সময় দিয়ে বিএসইসির কাছে দিক নির্দেশনা চেয়ে চিঠি দেয়। তবে বিএসইসি ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো দিকনির্দেশনা বা পরামর্শ দেয়া থেকে বিরত থাকে। গত ১১ জুলাই কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ম্যানেজমেন্টের কাঁধে দায়িত্ব দেয় পরিচালনা পর্ষদ।

এর আলোকে ম্যানেজমেন্ট কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের তালিকাভুক্তির বিষয়ে আইন-কানুন পর্যালোচনা করে। যা যাছাই-বাছাই শেষে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে শর্তসাপেক্ষে আগামী মঙ্গলবার লেনদেন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসইর পর্ষদ। এর আগে ২৩ মে আর্থিক হিসাবে অসঙ্গতির অভিযোগে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে তালিকাভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ।

আর ৪ জুলাই কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ইস্যুতে অসহযোগিতার জন্য বিতর্কিত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ অ্যান্ড আক্তারের প্রাকটিসিং লাইসেন্স নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয় দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সব ধরনের কোম্পানির নিরীক্ষা কাজের যোগ্যতা হারিয়েছে। আইপিওতে কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেড।