মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক টানা দরপতনে বিএসইসি সহ সরকারের নীতি নির্ধারকদের মাঝে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সরকারের নানা আন্তরিকতার পরও কেন পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না এ প্রশ্ন ছিল সরকারের উধ্বর্তন মহলের। একটি চক্র পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে টানা দরপতন ঘটিয়েছে। এ চক্রটি কারা খুঁজতে শুরু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পুঁজিবাজারে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাপক দরপতন হয়েছে।

এ দরপতনের পেছনের কারণ খতিয়ে দেখতে গত ২১ জুলাই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপর থেকে তদন্ত কমিটি বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। এর মধ্যে দরপতনের পেছনে অস্বাভাবিক লেনদেনের নেপথ্যে হোতাদের তথ্য এসেছে তদন্ত কমিটির কাছে।

বিএসইসির তদন্ত কমিটি কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। রোববার কমিটি কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

টানা ১৫ কার্যদিবসের এ তদন্তে কী ধরনের অনিয়ম বা কারা অস্বাভাবিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত তা এখনও জানা যায়নি। তবে টানা নেতিবাচক লেনদেন ও অস্বাভাবিক কার্যক্রমের সঙ্গে বড় কারসাজি চক্রের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা যায়। এদিকে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন ঈদের আগেই প্রস্তুত করা হয়েছিল। এখন তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে দরপতনের নেপথ্যে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনকারী শীর্ষ ১৭ প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীকে তলব করেছে বিএসইসি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি। তাদেরকে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে চিঠি পাঠানো হয়েছেও ডাকা হয়েছে এর মধ্যে ১৭ প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীকে।

এর মধ্যে প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজ লিমিটেড, কোয়ান্টা ইক্যুইটিজ লিমিটেড, রেয়ার ইন্টারন্যাশনাল এবং নাহার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং কোম্পানি। আর শুনানির জন্য ডাকা ব্যক্তিরা হলেন: নারায়ণ চন্দ্র পাল, মিশু পাল, সুজন পাল, আরতি পাল, তাপস পাল ও নারায়ণ চন্দ্র পাল, তাপসী রানী পাল, প্রিতম পাল, নিতু পাল, সুলাইমান রুবেল, নাজমুন নাহার, মোহাম্মদুজ্জামান ও মো. মুহিবুল ইসলাম।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট এই ১৭ প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীর নামে শুনানির জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত ৫ আগস্ট বিএসইসি’র এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে ১৭টি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগকারীকে চিঠি দিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে গঠিত তদন্ত কমিটি কর্তৃক ১৭ প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীকে শুনানির খবর পুঁজিবাজারে ছড়িয়ে পড়লে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক লেনদেন এবং স্টক এক্সচেঞ্জে অস্বাভাবিক ট্রেড ভলিয়ম খতিয়ে দেখতে গত ২১ জুলাই বিএসইসি’র পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিএসইসি উপপরিচালক মো. অহিদুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ রাকিবুর রহমান। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। তদন্তের স্বার্থে পরে আরো ২ জনকে এ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তারা হলেন, ডিএসইর সহকারী জেনারেল ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং মহাব্যবস্থাপক সিফুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ২১ ধারা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর ১৭ (ক) ধারা এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ) বিধিমালা, ১৯৯৫-এর বিধি ৬ অনুযায়ী গঠিত কমিটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে।