মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানী প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিশেষ সাধারন সভায় (ইজিএম) টাকার লেনদেন হয়েছে। যা দিয়ে এজিএম পার্টিদের মাধ্যমে কোম্পানিটির আলোচ্যসূচি (এজেন্ডা) পাস করানো হয়েছে। এতে করে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারগন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কোম্পানিটির ইজিএমে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে।

প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ আগস্ট রোববার সকাল ১০টা ৩৩ মিনিটে রাজধানীর খামার বাড়ীস্থ কেআইবি মিলনায়তনে এ সভা দু’টি অনুষ্ঠিত হয়। কোম্পানী সচিব জগদীশ কুমার ভঞ্জু এফসিএস এর পরিচালনায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভাটি শুরু হয়।

শুরুতে এজেন্ডা ঘোষণা ছাড়াই প্রস্তাবক ও সমর্থকদের মঞ্চে আসার আহবান জানালে শেয়ারহোল্ডাররা চিৎকার করে প্রতিবাদ করতে থাকলে কোম্পানী সচিব এজেন্ডা পড়া শুরু করেন। পরে কয়েকজন শেয়ারহোল্ডার প্রস্তাব ও সমর্থন করার জন্য লাইন ধরে মঞ্চে এসে আবদুল আওয়াল মিন্টু, তার পরিবারবর্গ, পরিচালক এবং কোম্পানী সচিবের গুনগান গেয়ে বক্তব্য রাখেন।

টাকার লেনদেন সর্ম্পকে একজন সাধারণ শেয়ারহোল্ডার জানান, সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ইজিএমে কোন প্রকার কথার বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ তাদের ভাড়া করা এজিএম পার্টি দিয়ে ইজিএমের এজেন্ডা পাস করিয়েছেন। এরা এজেন্ডা ঘোষনা করার আগেই তাদের মাধ্যমে পাস করিয়ে নেয়। এই এজেন্ডা পাস করার কাজের বিনিময়ে এজিএম পার্টিরা কোম্পানির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় বলে শেয়ারহোল্ডারা জানান।

প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ইজিএম পাস করা এজিএম পার্টির এক সদস্য বলেন, আমরা কোম্পানির উন্নয়নের জন্য ইজিএম পাস করে থাকি। তার বিনিময়ে কোম্পানি আমাদের আসা যাওয়ার যাতায়াত ভাড়া এবং চা নাস্তা খাওয়ার জন্য আমাদের কিছু টাকা দিয়ে থাকেন।

ইজিএমে টাকার লেনদেন সর্ম্পকে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচলনা পর্ষদের কাছে জানতে চাইলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান। এদিকে বিনিয়োগকারী সেলিম রেজা, আজাদ আহসান বাচ্চু, আনিসুর রহমান, রাজিব ও আবদুল মোতালেব মজুমদার সহ কিছু শেয়ারহোল্ডারা উপস্থিত ছিলেন। শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে একমাত্র সেলিম রেজাই বেশ কিছুক্ষণ বক্তব্য রাখার সুযোগ পান।

তিনি তার বক্তব্যে আবদুল আওয়াল মিন্টুকে আব্বা (পিতা) সম্বোধন করে এ ফ্যামিলির সকলকে দেশের সেরা ব্যক্তিত্ব বলে দৃঢ় ও বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করেন। তার মতে আবদুল আওয়াল মিন্টু মানে বাংলাদেশের মানচিত্র। প্রগতির এমডি খুব ভালো। সেক্রেটারী তিনি তো ডাইনামিক। মিন্টু সাহেব কোন ভুট্টো সাহেবের কথা রাখবেন না।

আজাদ আহসান বাচ্চু মঞ্চের দিকে ইশারা করে বলেন, এদের মনের গভীরতা মাপা যায় না।

প্রগতিতেও প্রকৃত শেয়ারহোল্ডারদের দুর্গতি চিত্র সরেজমিনে দেখা গেছে। শেয়ারহোল্ডারা বসে থেকে শুধু চিৎকার করেছে যে, আমাদের বলতে দিন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ততক্ষণে এজিএম পাস হয়ে গেছে। চেয়ারম্যান এসে এজিএমের সমাপ্তী ঘোষণা দিলেন। ১০টা ৫৫ মিনিটে। আর ১১টা ৪ মিনিটে ইজিএমের ঘোষণা দিলেন। পূর্বের ন্যায় ইজিএমও পাস হয়ে গেলো।

এ বিষয়ে দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের সাথে কথা হয়। বিনিয়োগকারীদের নেতা সেলিম চৌধুরীর সাথে তিনি বলেন, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স ভালো একটি কোম্পানী। সুন্দর ডিভিডেন্ড দিযেছে। কিন্তু কেন শেয়ারহোল্ডারদের বক্তব্য দিতে দিলো না। এতেতো কোম্পানীটিই লাভবান হতো। আমরা আশা করি, কোম্পানীগুলো শেয়ারহোল্ডারদের বক্তব্য শুনবেন। শেয়ারহোল্ডারদের বক্তব্যের পরই এজেন্ডা উপস্থাপন করতে হয়।