দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশ নেই, সেসব কোম্পানির জন্য পৃথক ক্যাটাগরি করার অনুমতি পেয়েছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। কিন্তু অনুমতি পাওয়ার পর এখন পিছুটান দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ডিএসইর একটি সূত্র এ তথ্য জানায়।

সূত্র জানায়, তালিকাভুক্ত সেসব কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশ নেই, সেসব কোম্পানিগুলোর জন্য আলাদা ক্যাটাগরি চালু করতে চেয়ে এর আগে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করেছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমতিও দিয়েছিল বিএসইসি। এখন আলাদা ক্যাটাগরি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় ডিএসই।

এ বিষয়ে ডিএসইর এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আলাদা ক্যাটাগরি করতে গেলে ডিএসইর সিস্টেমে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যা করতে বেশ কিছু টাকা ব্যয় হবে। এর বিপরীতে কোনো আয় হবে না ডিএসইর।

আর ক্যাটাগরি করার কারণ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের জানিয়ে দেওয়া এবং সাবধান করে দেওয়া। যেটা ক্যাটাগরি না করে ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানিগুলোর তালিকা দিয়েও করা যেতে পারে। তাই এ বিষয়ে বিএসইসিকে একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে। বিএসইসি অনুমতি দিলেই কোম্পানিগুলোর তালিকা ওয়েবসাইটে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হবে।

উল্লেখ্য, উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ তালিকাভুক্ত এমন কোম্পানিগুলোর জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জে একটি আলাদা ক্যাটাগরি চালু করতে বলেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই ক্যাটাগরি চালুর বিষয়ে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

নির্দেশনায় গত জুলাই মাসের মধ্যেই আলোচিত ক্যাটাগরি গঠন করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের প্রেক্ষিতে এপ্রিলে বিএসইসির পক্ষ থেকে ন্যুনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর জন্য একটু আলাদা ক্যাটাগরি চালুর কথা ঘোষণা করে বিএসইসি।

পরে গত ২১ মে এই বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তারই প্রেক্ষিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর জন্য দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে তাদের সংশ্লিষ্ট ট্রেডিং বোর্ডে আলাদা একটি ক্যাটাগরি গঠনের জন্য এই নির্দেশ দেয় কমিশন।

২০১০ সালের ধসের পর পুঁজিবাজারে গতি ফেরানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ন্যুনতম শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে বিএসইসি। তখন অভিযোগ উঠেছিল, পুঁজিবাজারে বুদ্বুদের পেছনে অনেক কোম্পানির উদ্যোক্তাদেরও পরোক্ষ ভূমিকা ছিল।

শেয়ারের দাম বাড়ার পর অনেক কোম্পানির উদ্যোক্তারা বেশিরভাগ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর বিএসইসি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্সের ২সিসি ধারার আওতায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ন্যুনতম শেয়ার ধারণের শর্ত আরোপ করে নোটিফিকেশন জারি করে।

ওই নোটিফিকেশন অনুসারে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদেরকে (স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতিত) সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। অন্যদিকে ন্যুনতম ২ শতাংশ শেয়ার না থাকলে কোনো উদ্যোক্তা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য তথা পরিচালক হতে পারবেন না।

বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে, আদালত বিএসইসির পক্ষেই রায় দেয়। ন্যুনতম শেয়ার ধারণের নির্দেশনার পর কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা বাজার থেকে শেয়ার কিনে তাদের কোটা পূরণ করলেও অনেক কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ওই নির্দেশনা পরিপালন করেনি।