দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠন সংক্রান্ত পুরনো নোটিফিকেশনটি আবার কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা যেসব কোম্পানি এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত রয়েছে, সেসব কোম্পানির কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য ২০০২ সালের এক নোটিফিকেশন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দাখিলের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে কমিশন। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রায় ৫ মাস অতিক্রম হলেও জেড ক্যাটাগরির বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

সম্প্রতি বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৬৮২তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসি জানায়, কমিশনের পরিচালক মো. মনসুর রহমান হবেন কমিটির আহ্বায়ক, উপপরিচালক শেখ মো. লুৎফুল কবির সদস্য ও উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম সদস্য সচিব। তারা ২০০২ সালের নোটিফিকেশনটি পর্যালোচনা করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কমিশনকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, যেসব কোম্পানি ১ বছর কিংবা তার বেশি সময় ধরে জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে সেগুলোর জন্য প্রযোজ্য কমিশনের ২০০২ সালের নোটিফিকেশনের উপর আলোচনা ও সার্বিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দাখিলের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

কমিটির সদস্যরা হলেন: বিএসইসির পরিচালক মো. মনসুর রহমান-আহবায়ক, উপ-পরিচালক শেখ মো. লুৎফুল কবির-সদস্য এবং উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম-সদস্য সচিব। গত ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কমিশনের ৬৮২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সাড়ে ৪ মাস অতিক্রম হলেও এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।

এ ব্যাপারে বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, জেড ক্যাটাগরিতে যেসব কোম্পানি ১ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করছে সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তার কার্যক্রম চলছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই এ বিষয়ে কমিশন নতুন কোন সিদ্ধান্ত জানাবে।

উল্লেখ্য, যেসব কোম্পানির ১ বছর বা তার বেশি সময় ধরে জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে সেগুলোর জন্য প্রযোজ্য কমিশনের ২০০২ সালের নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে, যেসকল কোম্পানি ১ বছর কিংবা তার বেশি সময় জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে সেগুলোর পরিচালনা পর্ষদ আগামী ৬ মাসের মধ্যে বিশেষ সাধারণ সভার (ইজিএম) মাধ্যমে পুন:গঠন করতে হবে। এ সংক্রান্ত ইজিএম অনুষ্ঠিত হওয়ার অন্তত তিন সপ্তাহ আগে

শেয়ারহোল্ডারদের নোটিশের মাধ্যমে জানাতে হবে এবং একটি বাংলা অপরটি ইংরেজিসহ দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তা প্রকাশ করতে হবে। পরিচালনা পর্ষদ পুন:গঠনের ক্ষেত্রে নতুন পরিচালক কোম্পানির স্পন্সর, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্য থেকে গ্রুপিংভাবে নির্বাচিত হবে। ইজিএম অবশ্যই অবাধ এবং স্বচ্ছ হতে হবে।

কোম্পানির চেয়ারম্যান হওয়ার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যেসব কোম্পানির স্পন্সর পরিচালকদের শেয়ারহোল্ডিং ৫০ শতাংশের কম রয়েছে সেগুলোর পুন:গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান স্পন্সর পরিচালক গ্রুপের মধ্য থেকে নির্বাচিত হতে পারবে না। এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রফেশনাল বিবেচনায় নিয়োগকৃত হবেন।

পুন:গঠিত পরিচালনা পর্ষদে কারা পরিচালক হতে পারবে না সে বিষয়ে বলা হয়েছে, কোম্পানির সাবেক এক্সিকিউটিভ, সাবেক স্ট্যাচুটরি অডিটর অথবা কোম্পানির অডিটরের সঙ্গে ব্যবসা কিংবা প্রফেশনাল সম্পর্ক রয়েছে অথবা কনসালট্যান্ট, কোম্পানির বিক্রয় বা ক্রয়ে ১০ শতাংশ অবদান রয়েছে এমন কোনো কাস্টমার অথবা সাপ্লাইয়ার, বর্তমান পরিচালক-স্পন্সর অথবা কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে প্রফেশনাল সম্পর্ক রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তি পুন:গঠিত পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হতে পারবেন না।

কোম্পানি পুন:গঠিত হওয়ার পর ৬ মাসের মধ্যে কোম্পানির ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তি; সেটা যদি পরিচালক কিংবা অডিটরও হয় তাকে চিহ্নিত করবে এবং তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কোম্পানিকে মুনাফায় ফেরানোর জন্য পুন:গঠিত পরিচালনা পর্ষদ অপারেশনাল এবং ফাইন্যান্সিয়াল পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

যদি পুন:গঠিত পরিচালনা পর্ষদ ২৪ মাসের মধ্যে কোম্পানির অপারেশনাল এবং ফাইন্যান্সিয়াল পারফরম্যান্স উন্নত না করতে পারে তখন আইন অনুযায়ী কোম্পানিকে মার্জার অথবা বিলুপ্ত বা অবসায়ন করা হবে। উল্লেখিত আইন অনুযায়ী, বিদ্যমান জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কমিশন পদক্ষেপ নিলেও এখনো তার বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই কমিশনের পক্ষ থেকে জেড ক্যাটাগরির বিষয়ে নতুন কোন সিদ্ধান্ত আসবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জে বেশ কয়েকটি উৎপাদন বন্ধ, লোকসানি ও দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ তাদের ক্ষমতাবলে দুটি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করে। পরবর্তী সময়ে আরও চারটি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তা অনুমোদনের জন্য বিএসইসিতে মতামত চেয়ে পাঠায়।

কিছু কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতামত চায় তারা। যদিও তালিকাচ্যুতির বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ উদ্যোক্তাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে কমিশন কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন সম্পর্কিত পুরনো নোটিফিকেশনটি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়।

লভ্যাংশ না দেওয়া, সময়মতো বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা কিংবা ছয় মাসের বেশি পরিচালন কার্যক্রমে না থাকার মতো কারণ ঘটলে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ম অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়। এর ফলে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য নয় কার্যদিবস অপেক্ষা করতে হয়।

যদিও অন্য সব শেয়ার কেনার তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিক্রয় উপযোগী হয়। এ ছাড়া ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার কেনাবেচায় কোনো মার্জিন ঋণ নিতে পারেন না বিনিয়োগকারী। বর্তমানে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪১টি কোম্পানি রয়েছে।