দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টালমাটাল অবস্থার মধ্যেও আগস্ট মাসে তালিকাভুক্ত ১৬১ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার বেড়েছে। বিশেষ করে মন্ধা পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের আগ্রহ রয়েছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে অধিকাংশ শেয়ারের দর ফেসভ্যালুর কাছাকাছি চলে আসায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

তাছাড়া সরকারসহ পুঁজিবাজার নীতি নির্ধারকরা বাজার নিয়ে আন্তরিকতার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ার কারন বলে মনে করছেন তারা। এসব কোম্পানির মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণের হার মোটের প্রায় ১ শতাংশ বা এর বেশি বে০ড়েছে এমন কোম্পানি ছিল ৩২টি। এগুলোর বড় অংশই ছিল বীমা খাতের।

তালিকাভুক্ত ৩১৮ কোম্পানির মধ্যে আগস্ট মাসে ৩১৪টির শেয়ার ধারণের হার পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে। যে চার কোম্পানি এখন পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের ধরন অনুযায়ী শেয়ার ধারণের হার প্রকাশ করেনি সেগুলো হলো: দি সিটি ব্যাংক, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, সিএনএটেক্স ও তুংহাই নিটিং। এর মধ্যে শেষ দুটি গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে এ তথ্য প্রকাশ করছে না। অন্যদিকে অবসায়নের প্রক্রিয়ায় থাকা পিপলস লিজিংও গত দুই মাস ধরে এ তথ্য প্রকাশ করছে না।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, সিলকো ফার্মা, ন্যাশনাল টিউবস, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মুন্নু স্টাফেলার্স, এডভেন্ট ফার্মা, আল-হাজ্ব টেক্সটাইল, এএফসি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স এবং স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ধারণ করা শেয়ারের হার মোটের ২ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এর বিপরীত চিত্রও আছে। গত মাসে তালিকাভুক্ত ১১৭ কোম্পানি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমেছে। সংশ্নিষ্ট কোম্পানির মোট শেয়ার বিবেচনায় অন্তত ১ শতাংশ শেয়ার কমেছে এমন কোম্পানি ছিল ২৮টি।

বৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষে :শেয়ার ধারণের হার বিবেচনায় গত আগস্টে বীমা খাতের গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার মোটের সোয়া ৯ শতাংশ বেড়ে ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যদিও এর প্রভাব কোম্পানিটির শেয়ারদরে পড়েনি। উল্টো জুলাইয়ের শেষ দিনের তুলনায় আগস্টের শেষ দিনে এটির শেয়ারদর সোয়া ১ শতাংশ কমে ২৪ টাকা ১০ পয়সায় নামে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পাবলিক অর্থাৎ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিক্রি করা শেয়ার কিনেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রাইম ইন্স্যুরেন্সে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার মোটের ৫ শতাংশ বেড়ে ১২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ ৫ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২ শতাংশ এসেছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের থেকে, বাকি ৩ শতাংশ এসেছে পাবলিক শেয়ার থেকে। গত মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৫ শতাংশ বেড়ে ২১ টাকা ৬০ পয়সায় উন্নীত হয়। তৃতীয় অবস্থানে থাকা অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সে মোটের ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে শেয়ারটির দর প্রায় অপরিবর্তিত ছিল।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ৪ শতাংশের ওপর বেড়েছে তালিকাভুক্ত সিলকো ফার্মা ও ন্যাশনাল টিউবসে। সিলকো ফার্মায় মোটের ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়ে ১৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে এবং ন্যাশনাল টিউবসে মোটের ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে ২০ দশমিক ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার বৃদ্ধির প্রভাবে সিলকো ফার্মার শেয়ারদর প্রায় ৩১ শতাংশ বেড়ে ৩৫ টাকা এবং ন্যাশনাল টিউবসের শেয়ারদর ১০ শতাংশ বেড়ে ১২৬ টাকা ছাড়িয়েছিল।

এ ছাড়া সংশ্নিষ্ট কোম্পানির মোট শেয়ার বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ৩ থেকে পৌনে ৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে এডভেন্ট ফার্মা, মুন্নু জুট স্টাফেলার্স ও রূপালী লাইফে। এর মধ্যে এডভেন্টের বাজারদর ১৫ শতাংশ এবং রূপালী লাইফের দর ৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে মুন্নু জুট স্টাফেলার্সের দর বেড়েছে ৫৪ শতাংশেরও বেশি। মোটের ২ থেকে প্রায় ৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার বেড়েছিল আল-হাজ্ব টেক্সটাইল, এএফসি এগ্রো, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স ও স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের।

কমার শীর্ষে :গত জুলাইয়ের শেষে ওরিয়ন ইনফিউশনসে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ছিল মোটের ৩১ দশমিক ২১ শতাংশ। আগস্টের শেষে যা কমে নেমেছে ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশে। অর্থাৎ এক মাসেই প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে ২৭ লাখ ৩৮ হাজার। পুরো এ শেয়ার গেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে। যদিও এতে শেয়ারটির দরে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

গত মাসে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমায় এরপরের অবস্থানে থাকা নিউ লাইন ক্লোথিংস থেকে মোটের সোয়া ১২ শতাংশ কমে ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশে, প্রগ্রেসিভ লাইফ থেকে সোয়া ৬ শতাংশ কমে সোয়া ১৯ শতাংশে নেমেছে। মোটের ৪ থেকে প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে ফরচুন সুজ ও সিনোবাংলা থেকে। ৩ শতাংশের ওপর কমেছে বিডি কম, বিডি অটোকার ও স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সে। ২ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে ঢাকা, মেঘনা ও সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, বিকন ফার্মা ও প্রাইম ফাইন্যান্স থেকে।