দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টার পরও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো যাচ্ছে না। ফলে শেয়ার বিক্রির চাপ অব্যাহত রেখেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। আগের ছয় মাসের মতো সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসেও বিদেশিরা শেয়ারবাজার থেকে যে পরিমাণ শেয়ার কিনছেন বিক্রি করেছেন তার থেকে বেশি। এ নিয়ে টানা সাত মাস বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি করল। দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এর আগে কখনো বিদেশিরা টানা সাত মাস এমন শেয়ার বিক্রি অব্যাহত রাখেনি।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনার পর এ তথ্য পাওয়া গেছে। বাজারের ওপর আস্থা না পাওয়ায় বিদেশিরা এভাবে শেয়ার বিক্রি করছেন বলে অভিমত বাজার সংশ্লিষ্টদের। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মাসের পর মাস শেয়ার বিক্রির চাপ অব্যাহত থাকায় সার্বিক শেয়ারবাজারেও মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। প্রায় সাত মাস ধরে মন্দা চলছে শেয়ারবাজারে।

সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসের বিদেশিরা ডিএসইর মাধ্যমে ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭১ হাজার ৪৮০ টাকার শেয়ার কিনেছেন। বিপরীতে বিক্রি করেছে ৩১৮ কোটি ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৭৮৮ টাকার শেয়ার। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে ৬০ কোটি ৩৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩০৮ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে বিদেশিরা। এর আগে আগস্টে বিদেশিরা যে টাকার শেয়ার ক্রয় করে, বিক্রি করে তার থেকে ১০৩ কোটি টাকার বেশি।

মাসটিতে বিদেশিরা ১৭৬ কোটি টাকার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছেন ২৭৯ কোটি টাকা। তার আগের মাস জুলাইয়ে বিদেশিরা শেয়ারবাজার থেকে ৩০৯ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রি করেন ৪৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ জুলাইয়ে বিদেশিরা শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি করেন ১৬৫ কোটি টাকার।

জুলাই মাসের মতো আগের চার মাসেও বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির চাপ ছিল। এর মধ্যে জুনে যে পরিমাণ টাকার শেয়ার ক্রয় করে, বিক্রি করে তার থেকে ১১ কোটি বেশি। মাসটিতে বিদেশিরা ২৯৫ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রি করেন ৩০৫ কোটি টাকা। একইভাবে মে মাসে বিদেশিরা শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি করে ৬৫ কোটি টাকা। তার আগের মাস এপ্রিলে ১৫৪ কোটি টাকা। আর মার্চে ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি ছিল ১২৪ কোটি টাকা।

অর্থাৎ মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশিরা যে পরিমাণ টাকার শেয়ার ক্রয় করেছেন বিক্রি করেছেন তার থেকে ৬৮২ কোটি টাকা বেশি। মাসের হিসাবে এর আগে বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির টানা চাপ ছিল গত বছর। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত টানা পাঁচ মাস বিদেশিরা শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি করেন। এর মধ্যে এপ্রিলে শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি করে ২৫ কোটি, মে-তে ২৮২ কোটি, জুনে ২০৭ কোটি, জুলাইয়ে ৩৩ কোটি এবং আগস্টে ৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছর টানা পাঁচ মাসে বিদেশিরা শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি করেন ৫৫৩ কোটি টাকা।

তবে টাকার অঙ্কে বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির চাপ সব থেকে বেশি ছিল ২০১০ সালে। ওই বছরের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর টানা তিন মাস বিক্রি বেশি ছিল বিদেশিদের। এর মধ্যে অক্টোবরে ৬৩ কোটি টাকা, নভেম্বরে ১৫৭ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বরে ৪৯৫ কোটি টাকা শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি ছিল বিদেশিদের। অর্থাৎ টানা তিন মাসে বিদেশিরা ৭১৫ কোটি টাকা ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি করে।

বিদেশিরা ২০১০ সালের যে সময় শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়, সে সময়েই দেশের শেয়ারবাজারে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়। সে সময়ে মহাধসে নিঃস্ব হয় অসংখ্যা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী।  ধকল সামলাতে না পেরে ধুকতে থাকে শেয়ারবাজার। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পার হলেও এখনো সেই ধকল পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি শেয়ারবাজার। এ পরিস্থিতেই চলতি বছরে এসে আবারও শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে বিদেশিরা।

গত সাত মাস বিদেশিরা অব্যাহতভাবে শেয়ার বিক্রি করলেও চলতি বছরের প্রথম দুই মাসের চিত্রি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারী পর পর দুই মাস শেয়ার বিক্রির থেকে ক্রয়ে বেশি মনোযোগী ছিল বিদেশিরা। জানুয়ারিতে বিদেশিদের শেয়ার বিক্রি থেকে ক্রয় বেশি হয় ১৭৫ কোটি টাকা। আর ফেব্রুয়ারীতে বিক্রি থেকে ক্রয় বেশি ছিল ৩২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের দুই মাসে বিদেশিরা যে টাকার শেয়ার বিক্রি করেন ক্রয় করেন তার থেকে ৪৯৮ কোটি টাকা বেশি। বিদেশিদের এমন টানা শেয়ার ক্রয়ের কারণে ওই দুই মাসে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের উত্থান ঘটে।