দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ কুড়েঁ কুড়েঁ চলছে। কমিশনের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জ তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। স্টক এক্সচেঞ্জের আরো দ্রুত চলার দরকার। কিন্তু গত ৫-৬ বছরে স্টক এক্সচেঞ্জে কোন যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে দেখি নাই। এখানে যোগ্য লোক নেই। স্টক এক্সচেঞ্জে করপোরেট গভর্ন্যান্স ঠিকমতো হচ্ছে কিনা সেটি দেখার সময় এসেছে।

কমিশনের সঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জ তাল মেলাতে পারছে না। বাজারের প্রতি স্টেকহোল্ডারদের যে দায়িত্ব রয়েছে সেটি ঠিকমতো পরিপালন করা হচ্ছে না। কমিশনকে শুধু সূচক উঠা-নামার মধ্য‌ে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।  শনিবার (০৫ অক্টোবর) রাজধানীতে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির কমপ্লায়েন্স অফিসারদের নিয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) “করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড” সংক্রান্ত আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, শেয়ারের দর কেন বাড়ে বা কেন কমে এগুলো দেখার দায়িত্ব কি কমিশনের? আমাদের সূচকের মধ্য‌ে আটকে রাখা হয়েছে। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যে কাজ করা হয়েছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। কমিশনের যে জনবল সংকট রয়েছে তা কেটে যাবে। আজ যারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবার এজিএম পার্টিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোম্পানি সচিবদের উদ্দেশ্য‌ে বিএসইসির কমিশনার বলেন, কোম্পানি সচিবরা কোম্পানির নয় বরং পরিচালকদের পিএস হিসেবে কাজ করছে। এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের ইন্টারেস্ট থাকে না বলে জানান কমপ্লায়েন্স অফিসাররা। যে কারনে তারা শুধুমাত্র বোর্ড মিটিংয়ে আসেন এবং ফি নিয়ে চলে যান। তাই কোম্পানির উন্নয়নে স্বতন্ত্র পরিচালকদের শক্তিশালী করা দরকার বলে জানান তিনি।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কমিশনে চাকরী বিধিমালা ছিল না জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, সরকারের মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রন হতো। আমরা কমিশনে আসার পরে চাকরী বিধিমালা করেছি। আমরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ আইন সংসদে পরিবর্তন করেছি, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ সংশোধন করেছি, বিশেষ ট্রাইবুন্যাল করেছি, স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন করেছি এবং অনেক কষ্টে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট করেছি।

একেকটি আইন সংসদে যাওয়া সহজ বিষয় নয়। এছাড়া আইওএসকো থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরি পাওয়া সহজ কথা নয়। এছাড়া কমিশনের কর্মকর্তাদের চাকরীর মান উন্নয়ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মানের সমান্তরাল হবে। বিএসইসির কর্মকর্তাদের ভাগ্য ভালো, আমাদের ২ বছর মেয়াদ বাড়ানোর কারনে এটি সম্ভব হয়েছে।

এই কমিশনার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে কমিশনে আসার কারনে বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে শক্ত দর কষাকষির (স্ট্রং বারগেইনিং) সক্ষমতা ছিল।পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি কাজ করেছে।

উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা দেখেন ১৯৯৬ সালে কমিশনের মর্যাদা কোথায় ছিল, আর এখন কোথায়। অথচ আজ রাস্তায় কমিশনের বিরুদ্ধে মিছিল করা হয়। যা বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরো ভবিষ্যতে বন্ধ হবে। এজিএম পার্টিও বন্ধ হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএমবিএর সভাপতি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক খায়রুল বাশার, সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমানসহ বিভিন্ন কোম্পানির সচিব, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও অন্যান্য কর্মকর্তারা।