রাজধানীসহ সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হলে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘নামমাত্র টাকা ভাড়া দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা ও আবাসিক হলে কারা থাকছে, কারা মাস্তানি করছে তা খতিয়ে দেখা হবে।’
বুধবার (৯ অক্টোবর) গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার পর বিভিন্ন পর্যায় থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের যে দাবি উঠেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী এক পর্যায়ে বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়েছে, খরচ কিন্তু আবার সরকারকেই বহন করতে হয়। একটা ছাত্রের জন্য বছরে কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়, সেই হিসাব কিন্তু কেউ রাখে না।’
তিনি বলেন, ‘তারা (বুয়েট শিক্ষার্থী) বলছে, অনেক কিছু স্লোগান দিচ্ছে, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক কিছু তারা বলতে পারে, এটা ঠিক। তবে একটু হিসাব করে দেখুন একটা ছাত্রের পেছনে সরকার কত টাকা খরচ করে? একজন ডাক্তার বানাতে কত টাকা খরচ করে, একজন ইঞ্জিনিয়ার বানাতে কত টাকা খরচ করে, একজন গ্র্যাজুয়েট করতে কত টাকা খরচ করে। হিসাব করেন, বের হয়ে যাবে। একবার পার্লামেন্টের ভাষণে কিছুটা আভাস দিয়েছিলাম।’
‘স্বাধীনতা ভালো, তবে তা বালকের জন্য নয়, এমন একটা কথা আছে। যে স্বাধীনতার মর্যাদা দিতে পারবে সেটা তার জন্যই ভালো। এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে’ বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি ব্যান (বন্ধ) করার কথা আসছে ঠিক আছে। বুয়েটের সিন্ডিকেট আছে, কমিটি আছে- তারা যদি মনে করে বন্ধ করে দিবে আমরা তো কোনো রকম হস্তক্ষেপ করব না। তাই বলে ছাত্র রাজনীতিকে দোষারোপ করার কোনো মানে নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সর্বাগ্রে ছাত্র রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ছাত্র রাজনীতি করেই এতদূর এসেছি। যারা উড়ে এসে জুড়ে বসে তারা ক্ষমতা উপভোগ করতে আসেন। তারা ছাত্র রাজনীতি পছন্দ করেন না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসব তো রাজনীতি না। এই যে ছেলেটাকে হত্যা করা হলো, এর মধ্যে রাজনৈতিক কোথায়? রাজনীতি ছিল জিয়াউর রহমান যখন আমাদের শওকত, অলিউল্লাহকে হত্যা করলেন। তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে হত্যা করেছে। তারা সংগঠন করতে দেবে না, বসুনিয়াকে রাজনৈতিকভাবেই হত্যা করেছে। চুন্নুকে হত্যা করা হয় খালেদা জিয়ার নির্দেশে, জহুরুল হক হলের ভিপি ছিল সে, ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো, এটাই ছিল তার অপরাধ। একটা মাত্র গুলিতে শেষ হয়ে যায় সে, এগুলো ছিল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।’
আবরার হত্যায় রাজনীতি কোথায় সেটা খুঁজে বের করতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই সাথে আমি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে বলব, যখন এই ধরনের ঘটনা একটা জায়গায় ঘটেছে, যখন দেখা গেছে এক রুম নিয়ে বসে জমিদারি চাল চালানো, প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রতিটি হল সব জায়গায় সার্চ করা দরকার। কোথায় কী আছে না আছে, খুঁজে বের করা। কারা মাস্তানি করে বেড়ায়, কারা এই ধরণের ঘটনা ঘটায় সেটা দেখা। সামান্য ১০টাবা২০ টাকা কা ৩০ টাকা সিট ভাড়ায় এক একজন রুমে থাকবে। তারপর সেখানে বসে এই ধরণের মাস্তানি করবে, সমস্ত খরচ বহন করতে হবে জনগণের ট্যাক্সের পয়সা দিয়ে, এটা কখন গ্রহণযোগ্য নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি হল, শুধু ঢাকায় না সারা বাংলাদেশের সব জায়গায় সার্চ করা হবে, দেখা হবে। সেই নির্দেশটা আমি দিয়ে দেব। এখন আপনাদের মাঝেই বলে দিচ্ছি, সেটা আমরা করব। আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনারা বের করে দেন কোথায় এই ধরনের কোনো রকম অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খলতা বা এই ধরনের কর্মকাণ্ড কারা করছে, কোন দল-টল আমি বুঝি না। পরিষ্কার কথা কোনো দল আমি বুঝি না।’