মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে (এসএমই) ডিএসইর ভি-নেক্সট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এসএমইর মাধ্যমে চীনা অর্থনীতি যেভাবে শক্তিশালী হয়েছে, বাংলাদেশও সেভাবে সফলতা পাবে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারের গভীরতা যেমন বাড়বে, তেমনি জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদানও বাড়বে। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ‘প্রমোটিং ডিএসই এসএমই অ্যান্ড ভি-নেক্সট প্ল্যাটফর্ম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন এ কথা বলেন।

ওই অনুষ্ঠানে চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রশংসা করতে গিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন বলেন, ‘চায়নাকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে নিয়ে আমরা ভাগ্যবান।’ খায়রুল হোসেন বলেন, চীনকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী নেওয়ায় বাজার কী সুবিধা পেল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাদের কাছ থেকে কি স্টোকহোল্ডাররা শুধুমাত্র কয়েক কোটি টাকাই পেল? তবে আমরা এখন কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সুফল পেতে যাচ্ছি।

খায়রুল হোসেন বলেন, জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ১৮ শতাংশের কাছাকাছি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের পুঁজিবাজার একটি সুদৃঢ় অবস্থানে যাবে এবং জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ৪০ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে। তিনি বলেন, এখন থেকে আমাদের ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো (এসএমই) পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারবে। পাশাপাশি ভি-নেক্সটের মাধ্যমে তারা বিদেশ থেকেও তহবিল পাবে। এসএমইর ওপর ভর করে চীনারা যেভাবে অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছে আমরাও সেটা করতে পারব।

আমাদেরকে অর্থনীতিতে উন্নয়ন ও জনগণের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে ছোট ও মাঝারি শিল্পের ওপর দাঁড়াতে হবে জানিয়ে ড. খায়রুল বলেন, এক সময়ে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়লেও এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। যেসব ছোট ও মাঝারি শিল্প হবে, সেগুলো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে যাবে। আমরা চলতি মূলধনের জন্য ব্যাংকঋণ নির্ভরশীলতা বাড়াতে পারি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি টেকসই শিল্পায়নের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে আসতে হবে।

এরই ধারাবাহিকতায় ডিএসই যে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হবে, তাতে নতুন এক ধরনের কালচার তৈরি হবে। বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যারা এদেশে সরাসরি বিনিয়োগ ও পুঁজিবাজারে পোর্টফোলিও বিনিয়োগে আগ্রহী, তারা ভি-নেক্সট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। কিন্তু এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে এক সময় তা থেকে বের হওয়ার জায়গা থাকতে হয়, যেটি আমাদের এতদিন ছিল না।

কিন্তু এখন ডিএসই এসএমই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তারা বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার সুবিধা পাবে বলে জানান এসইসির চেয়ারম্যান। ভি-নেক্সট প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে একাধিক দেশের (ক্রশবর্ডার) সঙ্গে সংযোগকারী মাধ্যম, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বৈশি^ক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে উদ্ভাবনী উদ্যোক্তারা তথ্য প্রচার, অনলাইনে সরাসরি রোড শো, সভা-সেমিনারের মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন করতে পারেন।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, পৃথিবীর উন্নয়ন ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, আমেরিকা, ইউকে, রাশিয়া, জাপান উন্নয়ন শুরু হয়েছিল বড় শিল্প দিয়ে। সেখানে কিন্তু ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশীদারত্ব কম। একমাত্র চীন ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান দিয়ে বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষমতার মালিক হয়েছে। চীন যেহেতু জনবহুল তারা এভাবেই সফলতা লাভ করেছে।

আমাদের দেশও জনবহুল, যেখানে ৬৫ শতাংশ মানুষ ৩৫ বছরের নিচে। আমাদেরও এসএমইর ওপর নির্ভর করেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। এ শিল্পকে সচল করতে পারলে ২০৪১ সালের আগেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

ড. খায়রুল হোসেন বলেন, ডিএসই যে দুটি সেবা নিয়ে সামনে এসেছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভি-নেক্সট নামে যে সেবাটি সবার সামনে তুলে ধরা হলো এর মাধ্যমে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ পাবে। পাশাপাশি স্মল ক্যাপ বোর্ড বা এসএমই বোর্ডের মাধ্যমে এই বিনিয়োগকারীরা টাকা বের করে নিতে পারবে। এর ফলে আমাদের দেশে এই ছোট ছোট কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ এখন অনেক বেড়ে যাবে।

ডিএসইর ভি-নেক্সট প্ল্যাটফর্মের বিষয়ে খায়রুল বলেন, ভি- নেক্সটের মাধ্যমে চীন থেকে শুরু করে সব দেশ থেকেই বিনিয়োগ আসবে। একই সঙ্গে করপোরেট সংস্কৃতি আসবে। এছাড়া আমাদের দেশে চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট, কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারিসহ যেসব দক্ষ জনবল গড়ে উঠবে, তাতে করে ভবিষ্যৎ পুঁজিবাজার নিয়ে আমি আশাবাদী।

ডিএসই যে এসএমই বোর্ড তৈরি করেছে, এগুলোর কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে পরিচালনা করে উদ্যোক্তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। ইস্যু ম্যানেজারদেরও তাদের কর্মকান্ড আন্তর্জাতিক মানে পরিচালনা করতে হবে।

ডিএসইকে উদ্দেশ্য করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ডিএসই শিগগির অটোমেটিক ট্রেডিং বোর্ড চালু করবে বলে আশা করছি, যেখানে ওটিসি মার্কেট থেকে শুরু করে বন্ড মার্কেটের ট্রেডিং শুরু হবে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের ও উন্নত দেশের সমতুল্য হবে।

তিনি আরও বলেন, শিগগির ১০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে। এর মধ্যে একটি কোম্পানির প্রসপেক্টাস আমাদের কাছে জমা আছে, যেটার অনুমোদন চলতি মাসের মধ্যেই দেওয়া হবে। আরও ১৯টি কোম্পানি এই প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আশা করি পুঁজিবাজারের গভীরতা অনেক বাড়বে। কম লেনদেনের কারণে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে গিয়ে আজ স্টক ডিলার ও ব্রোকাররা যে কষ্টে আছে, তাও অনেকাংশেই কেটে যাবে।