দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশে শতাধিক বহুজাতিক কোম্পানি বছরের পর বছর চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। তাদের মুনাফার বড় অংশই তারা নিজ নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থার অবসানে কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো কাজে আসছে না। এর কারণ, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নমনীয় নীতি দেখানো। ব্যবসার সুযোগ দিয়ে লাইসেন্স দেওয়ার আগে পুঁজিবাজারে আসার জোরালো কোনো শর্ত না থাকায় তারা আগ্রহ দেখায় না।

সংশিষ্টরা বলছেন, কোনো বহুজাতিক কোম্পানিই স্বেচ্ছায় পুঁজিবাজারে আসবে না। তাদের পুঁজিবাজারে আনতে হলে এখনই সুনির্দিষ্ট আইন দরকার। এদিকে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ব্যাপারে কোম্পানিগুলোকে চাপ প্রয়োগ করলে তারা বিনিয়োগ প্রত্যাহারের হুমকিও দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়ার পরও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না দেশে কার্যরত বেশিরভাগ বহুজাতিক কোম্পানি। দীর্ঘদিন ধরে একাধিক মহল থেকে বহুজাতিক ও সরকারি কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করার দাবি উঠে আসছে।

বর্তমানে দেশে প্রায় সাড়ে ৩০০ নিবন্ধিত বহুজাতিক কোম্পানি থাকলেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে মাত্র ১২টি। অথচ ভারতে একটি আইন করা হয়েছে, সরকারি সহায়তায় দেশে কোনো বহুজাতিক কোম্পানি ব্যবসা করলে নির্দিষ্টসংখ্যক শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়তে হবে। এটি সেখানে করতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়টি আমাদের পুঁজিবাজারে হচ্ছে না। এখানেও এমন আইন করতে হবে। তাহলে বাজারে বহুজাতিক কোম্পানি আসবে। ফলে বাজার সম্প্রসারিত হবে।

তবে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএসইসি চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন জানিয়েছেন, মোবাইল অপারেটর রবি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। রবি ও গ্রামীণফোনের সমস্যার বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। রবি বলেছে, সমস্যা সমাধান হলে তারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে।

কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে তাদের অর্থিক প্রতিবেদন শক্ত না হওয়ার কারণে তাদেরকে সেটার ওপর আরও কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তারা সেটা নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, তাদের সমস্যা সমাধানের যে কাজ করছি সেটি শেষ হওয়ার পর তাদেরকে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে কাজ করব। তাদের বলেছি সমস্যার সমাধান হওয়ার পর আপনারা আইপিও আবেদন নিয়ে আসেন; আমরা অনুমোদন দেব।

জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে অনেক বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। কিন্তু সেগুলো মানতে চায় না বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। কারণ, তারা এ দেশে ব্যবসা করে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের মুনাফা করছে। এসব মুনাফার বড় একটি অংশ তারা নগদ আকারে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। পুঁজিবাজারে না আসায় তাদের মুনাফার অংশ লাভ করার সুযোগ পাচ্ছে না দেশের মানুষ। এতে বাজারে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির ঘাটতি রয়েই যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, দেশে যেসব বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে, এর প্রায় সবগুলোই ভালো মানের। তারা প্রতি বছর মোটা অংকের মুনাফা করছে। এগুলো প্রতি বছরই শেয়ারহোল্ডারদের কাক্সিক্ষত লভ্যাংশ দিচ্ছে।

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ জানান, কোনো বহুজাতিক কোম্পানিই স্বেচ্ছায় পুঁজিবাজারে আসবে না। তাদের আনতে হলে নীতি নির্ধারকদের কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর নিবন্ধনের সময়ই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির শর্ত থাকা দরকার। আর যারা বর্তমানে নিবন্ধিত রয়েছে তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে। এ উদ্যোগ নিতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয়কেই।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যতদিন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে ব্যাপকহারে বহুজাতিক কোম্পানি এবং সরকারি মুনাফামুখী কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত না হবে ততদিন পর্যন্ত বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা উচ্চ পর্যায়ে যাবে না। তাই এ ধরনের কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। তবেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। তাই এ কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির ব্যা