দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে অস্থির হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। দিনের পর দিন দরপতন ঘটছে দেশের পুঁজিবাজারে। দিন যত যাচ্ছে পতনের মাত্রা ততো বেড়ে সাগরে ডুবছে বাজার। কিছুতেই যেন তীর খুঁজে পাচ্ছে না। এতে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

ফলে বেড়েই চলেছে পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ। টানা পতনে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজি হারিয়ে অনেকেই নির্বিকার। এর আগে পুঁজিবাজারে সৃষ্ট বড় দুই ধসেও এমন পতন দেখেনি তারা।

তারা বলছেন, সবাই ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের মহাধসের কথা বলেন। এরমধ্যে ১০ সালই ছিল বড় ধস। কিন্তু গত কয়েক মাসের দরপতন ওই ধস থেকেও ভয়াবহ। কেননা ওই সময়ে সূচকে লাগাতার পতন হয়নি। সূচক যেদিন পড়েছে সেদিন অস্বাভাবিক হারে কমেছে। যেমন ৩০০-৪০০ পয়েন্ট করে কমেছে। পরের দু-একদিন ঠিকই সূচক উঠেছে।

যদিও পতনের চেয়ে উত্থানের মাত্রা অনেক কমছিল। তাই বলে এমন টানা পতন দেখা যায়নি। চলমান নীরব পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) প্রধান সূচক গত ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে। যাতে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। এসব বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করার যেন কোনো উপায় অথবা কেউ নেই। সব নিয়ন্ত্রকই নিশ্চুপ। যা সূচক পতনের গতি আরও বাড়াচ্ছে।

বিনিয়োগকারীরা জানান, বাজার কারেকশন বা শেয়ারের দর সংশোধন হবে এটা স্বাভাবিক। সেজন্য তারা মানসিকভাবে প্রস্তুতও থাকেন। কিন্তু এর বদলে পুঁজিবাজারে এমন পতন নেমে আসবে, তা তারা ভাবতে পারেননি।

বর্তমান বাজারের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দেশে যেন বড় ধরনের কোনো অর্থনৈতিক সংকট চলছে। তাদের মতে, বাজার খেলোয়াড়রা আবারও সক্রিয় হয়েছেন। তারাই বাজার নিয়ে খেলছেন। আর এ কারণেই বাজার তার স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। বাজারের লাগাম টেনে ধরার জন্য তারা সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়ানো জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এদিকে পতনে দিক থেকে আবারও রেকর্ড গড়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮১০ পয়েন্টে। ডিএসইর এই সূচকটি ২ বছর ১০ মাস ১০ দিন বা ৬৯৩ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে।

এর আগে ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর ডিএসইএক্স সূচক আজকের থেকে কম স্থানে অবস্থান করছিল। অর্থাৎ ওই দিন ডিএসইএক্স সূচক অবস্থান করছিল ৪ হাজার ৮০১ পয়েন্টে। আজ ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট ও ডিএসই-৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১১১ ও ১৭০৫ পয়েন্টে।

ডিএসইতে গতকাল ৩২৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩২০ কোটি ৯১ টাকার। অর্থাৎ আজ ডিএসইতে লেনদেন ৬ কোটি টাকা বেশি হয়েছে।

ডিএসইতে গতকাল ৩৫৩টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৯টির বা ১৭ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৭১টির বা ৭৭ শতাংশের এবং ২৩টি বা ৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল টিউবসের। এদিন কোম্পানিটির ২৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ১৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার এবং ১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে ওয়াটা কেমিক্যাল।

ডিএসইর টপটেন লেনদেনে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে : এটলাস বাংলাদেশ, সিলকো ফার্মা, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, মুন্নু জুট স্টাফলার্স, জেএমআই সিরিঞ্জ, স্কয়ার ফার্মার এবং বঙ্গজ। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১৪৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৫৫ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৩৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৩৪টির, কমেছে ১৮৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির দর। গতকাল ১২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।