দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি আলহাজ্ব টেক্সটাইল মালিকপক্ষ একের পর এক কারখানার বন্ধের নামে প্রতারনার নাটক মঞ্চাস্থ করছেন। গত কয়েক মাস ধরে পাঁচ বার কোম্পানির বন্ধের ঘোষণা দেয়। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কার স্বার্থ হাসিলের জন্য আলহাজ্ব টেক্সটাইল হঠাৎ অনিদৃষ্টিকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলো। এক্ষেত্রে উৎপাদিত মজুত সূতার গোডাইনে রাখার জায়গা সংকুলান না হওয়ার অজুহাত দেখানো হয়।

একাধিক সুত্র নিশ্চিত করে বলেছে, আলহাজ্ব টেক্সটাইলের মালিকপক্ষ অত্যন্ত ধূরন্ধর প্রকৃতির লোক। তেমনি আলহাজ¦ টেক্সটাইলের মালিকপক্ষের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। কারন সম্প্রতি অগ্রনী ব্যাংক থেকে এক মামলায় আলহাজ্ব টেক্সটাইল কোটি কোটি টাকা পায়। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন অগ্রণী ব্যাংক থেকে মামলায় প্রাপ্ত কোটি কোটি কার পেটে হজম হয়েছে। আসলে কি এ টাকা আত্মসাৎের জন্য এত নাটক। এতে সহজে বোঝা যায় কোম্পানিটির কোন আর্থিক সংকট নেই। তবু ও সুকৌশলে গত জুন মাস থেকে এ নাটক প্লে করে চলছে।

৮ অক্টোবর অনিদিষ্টকালের লে অফ ঘোষণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বুঝে নিয়েছে এ কোম্পানিটি সামনে ডিভিডেন্ড ঘোষণার নামে নতুন করে নাটক তৈরি করছে। কারন ১ মাসের মাথায় কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড ঘোষণা করার কথা। এমন সময় কোম্পানিটি অনিদিৃষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা মানে মালিকপক্ষের সুকৌশলের প্রতারনা। কোম্পানিটির মালিকপক্ষের অসাধু উদ্দেশ্যের কারনে কোম্পানিটি দেওলিয়া হবার পথে যাচ্ছে।

কোম্পানি সুত্রে জানা যায়, এর আগে মিলের উৎপাদিত সুতা বিক্রি না হওয়ার কারণে উৎপাদিত মজুদ সুতা গোডাওনে রাখারা জায়গা সংকুলান না হওয়ায় গত ২৪ জুন সর্বপ্রথম কারাখানা বন্ধ ঘোষণা করে। ওই সময় ২৫ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ৩০ দিনের জন্য কারখানা লে-অফ করা হয়।

পরিস্থিতিতির উন্নতি না হওয়ায় পরবর্তীতে ২৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট, ১৫ দিনের জন্য, ৯ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট ১৫ দিনের জন্য, ২৪ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর ১৫ দিনের জন্য, ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ১৫ দিনের জন্য, এবং ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ০৭ অক্টোবর ১৫ দিনের জন্য মোট ১১৫ দিন মিল লে-অফ করার পরও বিক্রয় পরিস্থিতি উন্নতি হয়নি। তাই কোম্পানিটি অনিদৃষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে। পাশাপাশি গুদামে মজুদ করা পণ্য রাখার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তার ওপর যোগ হয়েছে চলতি মূলধন সংকট। এর মধ্যে যদি চলতি মূলধন সংকট কেটে যায়, তাহলে কারখানা চালু করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১১ পয়সা,

যেখানে আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৮ পয়সা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে কোম্পাটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪৩ পয়সা, যেখানে ২০১৭-এর জুলাই থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ইপিএস ছিল ৪২ পয়সা। ৩১ মার্চে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ১০ টাকা ৮৩ পয়সা, যা আগের বছরের ৩০ জুনে ছিল

বিএসইসি এ ব্যাপারে দ্রুত তদন্ত কোম্পানি গঠন না করলে হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর পথে বসবে। এর আগে আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পরিচালক হুদার বে হুদা কর্মকান্ডের কিঞ্চিুত খতিয়ান। বিএসইসি’র সুত্রের তথ্যের মতে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য প্রতিষ্ঠান এএনএফ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তালিকাভুক্ত কোম্পানি আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পরিচালক মোঃ শামসুল হুদার বিরুদ্ধে বিধি লংঘন করে গোপনে শেয়ার বিক্রি করেছেন।

কোম্পানির পরিচালক হয়েও তিনি ঘোষণা না দিয়ে চোরাইভাবে আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলের শেয়ার বিক্রি করেছেন। শুধু তা-ই নয়, পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির জন্য আইনে নির্ধারিত নিষিদ্ধ সময়েও তিনি শেয়ার বিক্রি করেছেন। সব শেয়ারই তিনি তার মালিকানাধীন ব্রোকারহাউজের মাধ্যমে বিক্রি করেছেন।

এছাড়া আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিল অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৫৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে মর্মে যে মিথ্যা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছিল, একজন পরিচালক হিসেবে শামসুল হুদা এর জন্যেও দায়ী। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)এর তদন্তে এই জালিয়াতি ধরা পড়েছে। এসব অপরাধে এএনএফ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলহাজ টেক্সটাইলের পরিচালক মোঃ শামসুল হুদার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বিএসইসি।

সম্প্রতি ১২ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৬৯৬তম কমিশন সভায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সুবিধাভুগী লেনদেন এবং ঘোষণা ছাড়া আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পরিচালকের শেয়ার বিক্রির আদেশ কার্যকর করার অপরাধে এএনএফ সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আজকের কমিশন বৈঠকে। এ জন্য বিষয়টি বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানো হবে।

অন্যদিকে এনফোর্সমেন্ট বিভাগের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এএনএফ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শামসুল হুদার হিসাবে থাকা সব শেয়ার জব্দ থাকবে। এসব শেয়ার বিক্রি, হস্তান্ত বা ব্যাংকে জামানত রাখা যাবে না।