দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ১. বিনিয়োগের আগে ঠিক করুন কৌশল: ধরা যাক, শেয়ারবাজারে আপনি ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাহলে বিনিয়োগের আগে আপনাকে কিছু কৌশল ঠিক করে নিতে হবে। আপনি যে টাকা বিনিয়োগ করবেন, তা কোনোভাবেই যেন ঋণের টাকা না হয়। আবার আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন সঞ্চয় থেকে বিনিয়োগ করবেন না।

শেয়ারবাজারে যে টাকা বিনিয়োগ করবেন, তা অবশ্যই হতে হবে উদ্বৃত্ত টাকা। এখন আসা যাক, কীভাবে বিনিয়োগ করবেন। আপনি যে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার ৫০ শতাংশ প্রথমে বিনিয়োগ করুন। বাকি ৫০ শতাংশ অর্থ রেখে দিন বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবে। প্রথমে যে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন, যদি দেখেন দাম কমে গেছে তাহলে জমা অর্থ থেকে আরও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করুন। তবে কখনোই পুরো অর্থ বিনিয়োগ না করে সব সময় ১০ থেকে ১২ শতাংশ অর্থ রেখে দিন।

২. তহবিলের খরচ বিবেচনায় নিন: আপনি যে ১০ লাখ টাকা শেয়ারবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বাজারে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন, সেই টাকার নিরাপত্তার কথা ভাবুন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করে যদি ওই টাকা ব্যাংকে রাখেন, তাহলে কিন্তু ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে সুদ পেতেন। ব্যাংকে টাকা রাখলে তা কমে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা তো নেই, বরং লভ্যাংশ আয় নিশ্চিত। তাই ঝুঁকি জেনেও যখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন আপনার টাকার একটি খরচকে বিবেচনায় নিন।

ব্যাংকে রাখলে নিশ্চিত যে ১০ শতাংশ সুদ পেতেন, সেটিকেই খরচ হিসেবে ধরে নিন। তাতে শুরু থেকে আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মুনাফার। সেটি লভ্যাংশ ও মূলধনি মুনাফা দুই-ই মিলিয়ে হতে পারে। তা না হলে আপনি যে টাকা বিনিয়োগ করছেন, তার খরচই তুলতে পারবেন না।

তাই যেসব কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ দেয়, সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করাই শ্রেয়। অনেক সময় দেখা যায়, দাম বাড়তে থাকলে অনেক বিনিয়োগকারী মুনাফা না তুলে আরও লাভের আশায় থাকেন। তাতে দেখা যায়, অনেক সময় লাভের বদলে লোকসান গুনতে হয়। এ ক্ষেত্রে লোভকে সংবরণ করুন। এ কারণে বিনিয়োগের আগে তহবিলের খরচ বিবেচনায় মুনাফারও একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরি।

৩. কোম্পানি বাছাই মুনাফার পূর্বশর্ত: আপনি আপনার টাকা কোথায় বিনিয়োগ করছেন বা করবেন, সেটি যেকোনো বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে যখন আপনি কোনো পণ্য কিনতে যান, তখন কিন্তু ভালো পণ্যটিই বাছাই করেন। নিজের হাতে মান যাচাইয়ের চেষ্টা করেন। তেমনি শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে ওই কোম্পানি সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করা আপনার দায়িত্ব। কোম্পানি নির্বাচনে যদি ভুল করেন, তাহলে আপনার বিনিয়োগটি শুরুতেই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।

যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন, সেটির মালিকানা ও পরিচালনায় কারা আছেন, সেই খবর সবার আগে নিন। কোম্পানি নিয়মিত নগদ লভ্যাংশ দিচ্ছে কি না, কোম্পানিটি কী ধরনের ব্যবসা করে, নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করে কি না, উদ্যোক্তাদের শেয়ারের পরিমাণ কেমন ও তাঁদের বিক্রির প্রবণতা সম্পর্কে জেনে নিন।

কোম্পানির বিক্রির প্রবৃদ্ধি ও বাজারে প্রতিযোগীদের তুলনায় অবস্থান কেমন ইত্যাদি বিষয় জানাও জরুরি। ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দীর্ঘ মেয়াদে মুনাফার সম্ভাবনা থাকে। আমরা যখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করি, তখন বিনিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সরেজমিনে দেখতে গিয়েছি। কারখানা এলাকায় গিয়ে কোম্পানি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছি। এখন তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসেই কোম্পানি সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়।

৪. ভুল সিদ্ধান্তে দেরি নয়: নানাভাবে খোঁজখবর নেওয়ার পর ভালো কোম্পানি বাছাই করতে গিয়েও ভুল হতে পারে। আবার আপনার বিনিয়োগের পর অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে ভালো কোম্পানির অবস্থাও খারাপ হতে পারে। যখনই বুঝতে পারবেন ভুল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন, তখনই লোকসানে হলেও সেই কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দিন। তাতে যে টাকা ফেরত পাবেন, অপেক্ষায় থাকলে সেটি না-ও পেতে পারেন।

৫. সময় নিন, সতর্ক থাকুন: যখনই আপনি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবেন, তখনই ন্যূনতম দুই বছর সময়ের জন্য এ বিনিয়োগের কথা ভাবুন। অর্থাৎ যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন, সেই কোম্পানির ন্যূনতম দুটি লভ্যাংশ গ্রহণ করুন। পাশাপাশি বাজারে শেয়ার কেনাবেচার মাধ্যমে মূলধনি মুনাফা তুলে নেওয়ার কথা ভুলবেন না কিন্তু।

নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। এ ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তত কয়েক বছরের বাজার পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণ করে তারপরই বিনিয়োগ করা উচিত। এ ছাড়া অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকাই ভালো। বলা হয়ে থাকে, শেয়ারে লাভ করতে হয় কেনার সময়ই। তাই শেয়ার কেনার সময় কোন দামে কিনছেন, সেই দাম যৌক্তিক কি না, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।  শাকিল রিজভী: ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি।