দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেট উন্নয়নের স্বার্থে পাবলিক ইস্যু বিধিমালায় আবারও পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এজন্য বন্ডের আইপিওর (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) জন্য আলাদা বিধিবিধান তৈরির চিন্তা করছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। আলাদা বিধানে বন্ডের আইপিওতে সাবস্ক্রিপশনের সময়, ন্যূনতম আবেদন ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রচলিত বিধান শিথিল করা হতে পারে। সম্প্রতি আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের বন্ড আইপিওতে নির্ধারিত ন্যূনতম পরিমাণ আবেদন জমা না পড়ায় এমন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে এসইসি। কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি পুঁজিবাজারে বন্ড ইস্যু করে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি। পাবলিক ইস্যু বিধিমালা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তলিকাভুক্ত হতে আইপিও সাবস্ক্রিপশনে (চাঁদা গ্রহণ) ন্যূনতম ৬৫ শতাংশ আবেদন জমা পড়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর কম হলে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী আইপিও বাতিল হয়ে যায়।

বন্ডের আইপিওতে চাঁদা গ্রহণের সময় ছিল ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে আশুগঞ্জ পাওয়ারের সেকেন্ডারি বাজারে লেনদেনযোগ্য বন্ডের ক্ষেত্রে মাত্র ৩৫ শতাংশ আবেদন জমা পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির বন্ড ইস্যুর প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের স্বার্থে আশুগঞ্জ পাওয়ারের জন্য ন্যূনতম সাবস্ক্রিপশনের বাধ্যবাধকতা শিথিল করার বিষয়টি বিবেচনা করছে এসইসি।

বিএসইসির এক কর্মকর্তা জানান, সরকার বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরাও চাইছি বন্ড মার্কেটটি গড়ে উঠুক। আমাদের এখানে সেকেন্ডারি বাজারে লেনদেনযোগ্য বন্ড প্রায় নেই বললেই চলে। এ কারণে বন্ডের আইপিওর জন্য আলাদা কোনো আইনও নেই। ফলে পাবলিক ইস্যু রুলসের আওতায় বন্ডের আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়।

আশুগঞ্জ পাওয়ারের বন্ডে মাত্র ৩৫ শতাংশ সাবস্ক্রিপশন হওয়ার কারণে আইনানুসারে এটি বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ এটি একটি নিরাপদ বিনিয়োগ। বন্ড মার্কেট গঠনের শুরুতেই যদি ন্যূনতম সাবস্ক্রিপশন না হওয়ার কারণে যদি আইপিও বাতিল হয়ে যায়, তাহলে দেশে বন্ডের মার্কেট গড়ে উঠবে না। তাই কমিশন আশুগঞ্জ পাওয়ারের বন্ডের ক্ষেত্রে পাবলিক ইস্যু রুলসের বিধিবিধান শিথিল করার বিষয়টি বিবেচনা করছে এসইসি।

গত মঙ্গলবার কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী এসইসির কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বন্ড আইপিওর ক্ষেত্রে ন্যূনতম সাবস্ক্রিপশন থাকার বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। তাছাড়া সাবস্ক্রিপশনের সময় শেষে বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ থাকার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, দেশে সরকারি কিংবা বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান আইপিওর মাধ্যমে সেকেন্ডারি বাজারে বন্ড ছাড়ার ঘটনা এটাই প্রথম। বর্তমানে পুঁজিবাজারে আইবিবিএল মুদারাবা পার্পিচুয়াল বন্ড নামে একটি করপোরেট বন্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা কমিশনের কাছে সাবস্ক্রিপশনের সময়সীমা আরও এক মাস বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি কমিশন আমাদের সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করবে। আর সময় বাড়ানো হলে নির্ধারিত পরিমাণ সাবস্ক্রিপশন হবে বলে আমরা আশাবাদী।

আইপিওর মাধ্যমে সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেনযোগ্য বন্ড ইস্যু করে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে ৪০০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুকেন্দ্রে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে আশুগঞ্জ পাওয়ারের। এর মধ্যে ভূমি উন্নয়ন ও অবকাঠামো কাজের জন্য ৪৬ কোটি ৮০ লাখ, প্রাথমিক জ্বালানি ৩০ কোটি, যানবাহন ক্রয়ে ৩ কোটি ৬০ লাখ, প্রকৌশলী ও পরামর্শক সেবার জন্য ৪ কোটি ৪০ লাখ, চলতি মূলধন বাবদ ১০ কোটি ৯৯ লাখ এবং আইপিওর খরচ খাতে ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল।