দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি কাট্টলি টেক্সটাইলের আইপিও তহবিল ব্যবহারের তথ্যে গরমিল পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) । গত বছরের জুনে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পায় কোম্পানিটি। কোম্পানিটি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইপিও তহবিল থেকে ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করার তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রকৃতপক্ষে ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব থেকে এ ধরনের কোনো লেনদেন হয়নি। অন্যদিকে কোম্পানির দেয়া এ তথ্য যাচাই না করেই প্রত্যয়ন করেছে নিরীক্ষা ফার্ম আহমদ অ্যান্ড আখতার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। এ বিষয়ে কাট্টলি টেক্সটাইল ও আহমদ অ্যান্ড আখতারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি।

আইপিও তহবিল ব্যবহারসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, এ বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে কাট্টলি টেক্সটাইল আইপিও তহবিলের ৩৪ কোটি থেকে ৫ কোটি ৫১ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয় করেছে এবং অব্যবহূত ছিল ২৮ কোটি ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। কোম্পানিটির আইপিও তহবিল ব্যবহারের বিষয়টি আহমদ অ্যান্ড আখতার প্রত্যয়ন করেছে।

বিএসইসি বলছে, কাট্টলি টেক্সটাইল এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সিএসএন হোল্ডিংসের অনুকূলে ৬০ লাখ টাকার ডিমান্ড ড্রাফট/ক্যাশ ক্রেডিট ইস্যু করে এবং একই দিন কোম্পানিটির ব্যাংক ব্যালান্স ছিল ২৫ কোটি ৪০ লাখ ১৩ হাজার ৯০৯ টাকা। এ বিষয়টি নিরীক্ষা ফার্ম আহমদ অ্যান্ড আখতার প্রত্যয়ন করেছে।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছ থেকে কোম্পানিটির ব্যাংক লেনদেনের বিবরণী সংগ্রহ করে বিএসইসি দেখতে পায়, এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি এ ধরনের কোনো লেনদেন হয়নি এবং নিরীক্ষকের প্রত্যয়ন করা ব্যালান্স সত্য নয়। অথচ আইপিও তহবিল ব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আহমদ অ্যান্ড আখতার কোম্পানিটির আইপিও তহবিলের অর্থ ব্যয়সংক্রান্ত সব ধরনের আনুষঙ্গিক কাগজপত্র সংগ্রহ ও যাচাই করে প্রত্যয়ন করেছে বলে উল্লেখ করেছে।

এদিকে কাট্টলি টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বাক্ষর করা ব্যাংক বিবরণী, মানি রিসিট ও পে-অর্ডারের তথ্য অনুসারে, এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির ডরমিটরি ভবন নির্মাণের জন্য সিএনএস হোল্ডিংসকে ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে সিএনএস হোল্ডিংসের পক্ষ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি ডরমিটরি নির্মাণ বাবদ কাট্টলি টেক্সটাইলকে ৬১ লাখ ৪১ হাজার টাকার বিল জমা দেয়া হয়।

কোম্পানিটির আইপিও তহবিলের বিষয়টি কমিশনের কাছে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তারা ব্যাংকের কাছে কোম্পানির জমা দেয়া ব্যাংক বিবরণীর সত্যতা জানতে চায়। একই সঙ্গে গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে এ বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাট্টলি টেক্সটাইলের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য তলব করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাংক ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোম্পানিটির লেনদেনের যাবতীয় তথ্য কমিশনের কাছে পাঠানো হয়। এতে দেখা যায়, ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখায় থাকা কাট্টলি টেক্সটাইলের ব্যাংক হিসাব থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোনো লেনদেন হয়নি।

পাশাপাশি কোম্পানিটির পক্ষ থেকে সিএনএস হোল্ডিংসকে ৬০ লাখ টাকা পরিশোধসংক্রান্ত যে ব্যাংক বিবরণী দেয়া হয়েছে, সেটি সত্য নয় বলে কমিশনকে জানায় ব্র্যাক ব্যাংক। ফলে এ বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে কাট্টলি টেক্সটাইল ও নিরীক্ষা ফার্ম আহমদ অ্যান্ড আখতার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত কমিশন কোম্পানি ও নিরীক্ষকের কাছ থেকে কোনো ব্যাখ্যা পায়নি বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাট্টলি টেক্সটাইলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. ফজলুল হক বলেন, কমিশনের কাছ থেকে এ বিষয়ে আমরা একটি চিঠি পেয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা এর ব্যাখ্যা দেব। ব্যাংক লেনদেনের অসত্য তথ্য দেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কাগজপত্র না দেখে কোনো কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান।

অন্যদিকে কাট্টলি টেক্সটাইলের আইপিও তহবিল ব্যবহারসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রত্যয়ন করা নিরীক্ষা ফার্ম আহমদ অ্যান্ড আখতারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (কনসালটেন্সি সার্ভিস) মো. নাসেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে সিএনএস হোল্ডিংসকে ৬০ লাখ টাকা পরিশোধসংক্রান্ত ব্যাংক বিবরণী, মানি রিসিট ও পে-অর্ডারের কপি সরবরাহ করেছে কাট্টলি টেক্সটাইল। সেখানে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বাক্ষর রয়েছে।

তাছাড়া এসব কাগজপত্র দেখে আমাদের কাছে সঠিক বলেই মনে হয়েছে। যেহেতু কমিশনের কাছ থেকে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, তাই আমরা এর জবাব দেব। এজন্য আমরা কমিশনের কাছে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় চেয়েছি। তাছাড়া ২১ অক্টোবর কমিশনে এ বিষয়ে কাট্টলি টেক্সটাইলকে শুনানিতে ডেকেছে বলে জানান তিনি। নিজেকে নিরীক্ষা ফার্মটির কনসালটেন্সি বিভাগের সিইও হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, নিরীক্ষাসংক্রান্ত বিষয়গুলো আমি দেখি না।

কাট্টলি টেক্সটাইলের আইপিও তহবিল ব্যবহারসংক্রান্ত প্রতিবেদনের আনুষঙ্গিক কাজ করেছেন আমাদের ফার্মের অডিট ম্যানেজার মেরাজুল হক খন্দকার এবং প্রতিবেদনটি প্রত্যয়ন করেছেন ফার্মের পার্টনার কাঞ্চি লাল দাস।

বিএসইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা আইসিবির কাছে পাঠিয়েছি। পাশাপাশি কোম্পানির কোনো ব্যত্যয় থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে এর নিরীক্ষক হিসেবে আহমদ অ্যান্ড আখতারের নাম আলোচনায় আসে।

কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদন ইস্যুতে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড আকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশকে (আইসিএবি) সহযোগিতা না করার কারণে এ বছরের জুলাইয়ে ফার্মটির পার্টনার কাঞ্চি লাল দাসের অডিট প্র্যাকটিসিং লাইসেন্স নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয় আইসিএবি। এর ফলে ফার্মটি যেকোনো ধরনের নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার যোগ্যতা হারায়। পাশাপাশি বিএসইসির নিরীক্ষক প্যানেল থেকেও ফার্মটিকে বাদ দেয়া হয়।