দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : পুঞ্জিভূত লোকসানে ও ৩০ শতাংশ পরিচালক শেয়ার ধারন না থাকলে বোনাস বা স্টক ডিভিডেন্ড প্রদানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বিএসইসি’র। তবে এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিডি অটোকার ও কনফিডেন্স সিমেন্ট লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন লঙ্গণ করার অভিযোগ উঠেছে কোম্পানিটি দুটো বিরুদ্ধে। পক্ষান্তরে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

এদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিডি অটোকারসও কনফিডেন্স সিমেন্ট লিমিটেড। আইন অমান্য করে বোনাস ঘোষণা করে ‘শোকজ’ দেয়ার কারণে উল্টো বিএসইসি ও ডিএসইকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন কনফিডেন্স সিমন্টে। শোকজ করার আইনগত ভিত্তি নেই বলেও জানিয়েছে কোম্পানির সচিব দেলোয়ার হোসেন তিনি বলেন, বিএসইসি ও ডিএসই চাইলেই শোকজ দিতে পারে না। আমরা শোকজ সম্পর্কে কিছু জানি না।

জানা গেছে, বিএসইসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ধারণ করার নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে রাইট শেয়ার, আরপিও, বোনাস শেয়ার, একীভূতকরণের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি করতে পারবে না। চলতি বছরের ২১ মে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিএসইসি। এরই মধ্যে গত ২৬ অক্টোবর কনফিডেন্স সিমেন্ট ১৫ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস ঘোষণা করে। পরদিন বিএসইসি তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। শোকজের প্রেক্ষিতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে কনফিডেন্স সিমেন্ট।

গত মঙ্গলবার ডিএসই’র প্রকাশিত তথ্য সূত্রে জানা যায়, বিডি অটোকারস ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত হিসাব বছরে পুঞ্জিভূত লোকসান হয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

সূত্র মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট একটি নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে কোন প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জিভুত (রিটেইন আর্নিং) লোকসান থাকলে সেই কোম্পানি লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এটিকে আরও পরিস্কার করার জন্য গত ২ অক্টোবর একটি নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা ও বিতরণ সংক্রান্ত একটি নোটিফিকেশন ২০১৮ সালের ২০ জুন প্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে বোনাস শেয়ার সংক্রান্ত আরও একটি নোটিফিকেশন চলতি বছরের ২৩ মে প্রকাশ করে। বিষয়টি বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির আবেদন পর্যালোচনা পূর্বক বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে অধিকতর স্পষ্ট করার প্রয়োজনে নগদ লভ্যাংশ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দেয় বিএসইসি।

ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, অন্যান্য সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করে, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহ পুঞ্জিভূত লোকসান বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট বছরের অর্জিত মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ, ঘোষণা ও বিতরণ করতে পারবে।

এদিকে, আইন ভঙ্গ হলে কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে।

এদিকে পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার সম্পূর্ণ করতে কনফিডেন্স সিমেন্টের করপোরেট পরিচালক কনফিডেন্স স্টিল লিমিটেড ১ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এ পরিমাণ শেয়ার বর্তমান বাজার দরে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পাবলিক মার্কেট থেকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কেনা হবে। এই ১ লাখ শেয়ার কেনা হলে কনফিডেন্স সিমেন্টের পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ধারণকৃত শেয়ার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যার পরিমাণ ৬ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৯টি। এর ০.১৫ শতাংশ শেয়ারের পরিমাণ ১ লাখ। অন্যদিকে বর্তমানে কোম্পানির পরিচালকদের মোট শেয়ার ধারণ ২৯.৮৮ শতাংশ। ১ লাখ শেয়ার কেনার পর পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ধারণকৃত শেয়ারের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩০.০৩ শতাংশ। তাই কনফিডেন্স সিমেন্ট চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

পুজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছে, যে মুহূর্তে কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার সুপারিশ করেছে, এই সময় তাদের হাতে ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই। ৩০ শতাংশ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আইনের আওতায় বোনাস লভ্যাংশ দিতে পারে না। ৩০ শতাংশ পূর্ণ হতে আরও এক মাস সময় প্রয়োজন। অথচ তারা বিএসইসিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বোনাস দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কোম্পানিকে কঠোর শাস্তির আওতায় না আনলে অন্য কোম্পানিগুলো সাহস দেখাবে।

কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ৬৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এ কোম্পানটির শেয়ার সংখ্যা ৬ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৯টি। এসব শেয়ারের মধ্যে চলতি আর্থিক বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ২৯.৮৮ শতাংশ, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ২৫.৭৮ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৪৪.৩৪ শতাংশ শেয়ার। কোম্পানিটি ৩০ জুন ২০১৭ ও ২০১৮ সমাপ্ত আর্থিকবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ করে বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে।