দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আগামী ৯ নভেম্বর দীর্ঘ ৭ বছর পর শ্রমিক লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দলটিকে আরো সুচারুভাবে সাজাতে স্বচ্ছ, ত্যাগী, সাবেক ছাত্রলীগের নেতাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, তারুণ্য নির্ভর, ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি পূর্ণ নেতাদেরকেই নেতৃত্ব আনা হবে। সে অনুযায়ী দলের শীর্ষ পদে বয়সের তারতম্যের কারণে বাদ পড়তে পারে অনেকেই। সেই সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী, টেন্ডার ও চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত নেতাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেওয়া হবে। তবে যাদের বিরুদ্ধে দুর্ণীতির অীভযোগ রয়েছে তারা শীর্ষে পদে থাকতে পারবে না এটা দুণীতি বিরোধী অভিযানে পরিস্কার।

প্রায় সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই সম্মেলনে নতুন কমিটিতে স্থান পেতে বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। প্রতিদিনই সংগঠনটির বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমণ্ডির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থাকছে নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কারা আসতে পারেন সে বিষয়ে তৃণমূলে চলছে বিস্তর আলোচনা।

তারুণ্যনির্ভর, ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতৃত্ব চাচ্ছে দলের হাইকমান্ড। ফলে শ্রমিক লীগের শীর্ষ পদসহ আগামী কমিটি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন বয়সের ভারে ন্যুজ নেতারা। সেই সঙ্গে টেন্ডার ও চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত নেতাদের ঝেটিয়ে বিদায় করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি অন্য দল থেকে এসে সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে যারা বড় পদ বাগিয়ে নিয়েছেন- এমন বিতর্কিত নেতাদেরও জায়গা হবে না শ্রমিক লীগের নতুন কমিটিতে।

এখন পর্যন্ত শ্রমিক লীগের সভাপতি হিসেবে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান আকন্দ। দীর্ঘদিন ঢাকা মহানগরের দায়িত্ব পালন করা এই নেতা রেলওয়ে শ্রমিক লীগের শীর্ষ পদে ছিলেন। আর সংগঠনের চ্যালেঞ্জিং মূহুর্তে দলের সভাপতি হতে চান বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামও। আলোচনায় আছেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, সহ-সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, সহ-সভাপতি আমিনুল হক ফারুক ও নওগাঁ থেকে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত এমপি ইসরাফিল আলম।

শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, সংগঠন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। অন্যদিকে দলটির সাধারণ সম্পাদক হতে চান, বর্তমান কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব মোল্লা, সফর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম মিলকী,

অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সুলতান আহমেদ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া। এছাড়া আলোচনায় আছেন, শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ, প্রচার সম্পাদক আজম, শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আবদুল হালিম।

সরেজমিনে দেখা যায়, দলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই শ্রমিক লীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের পদচারণায় মুখর থাকে ধানমণ্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কারা আসতে পারেন সে বিষয়ে সাধারণ নেতাকর্মীরা করছেন আলোচনা-সমালোচনা।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব মোল্লা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ও শেখ হাসিনার আদর্শের রাজনীতি করি। নেত্রী যাকে সংগঠনের দায়িত্ব দেবেন তার সঙ্গে কাজ করে শেখ হাসিনার হাতকে ও শ্রমিক লীগকে আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা করবো।

২০১২ সালের সর্বশেষ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক নেতা শুকুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন জনতা ব্যাংক ট্রেড ইউনিয়নের নেতা সিরাজুল ইসলাম। এই সময়ে ৪৫টি সাংগঠনিক জেলার কমিটি করা হয়েছে।

সভাপতি পদে আলোচনায় যারা: হাবিবুর রহমান আকন্দঃ শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান আকন্দ ২০০৩ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৯৪ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৮৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৯৬ থেকে এখন পর্যন্ত রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৫২ সালে জন্ম নেওয়া হাবিবুর রহমান আকন্দর জন্মস্থান গাজীপুর।

আমিনুল হক ফারুকঃ জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আমিনুল হক ফারুক ইতিপূর্বে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-১, দুই মেয়াদে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একবার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সোনালী ব্যাংক সিবিএ’র তিন মেয়াদে সভাপতি এবং ব্যাংক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করা এ শ্রমিকনেতা শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আগে মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

ইসরাফিল আলম এমপিঃ নওগাঁ থেকে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম ইতিপূর্বে ১৬ বছর ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

ফজলুল হক মন্টুঃ শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু ইতিপূর্বে একাধিকবার শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং পাবনা জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে ট্রেড ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িত ফজলুল হক মন্টু ১৯৬৯-৭০ সালে পাবলা জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বে ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি পাবনা জেলা মুজিব বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও শ্রমিকলীগের সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম।

খান সিরাজুল ইসলামঃ শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খান সিরাজুল ইসলাম ইতিপূর্বে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির এজিএস এবং কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সফর আলীঃ শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সফর আলী ১৯৮৪ সালে শ্রমিক লীগের সহ-সম্পাদক হিসেবে শ্রমিকলীগে যাত্রা শুরু করেন। তিনি শ্রমিক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রজীবনে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

শামসুল আলম মিলকীঃ শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম মিলকী ইতিপূর্বে শ্রমিক লীগের শিক্ষা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি রাজউক শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং টঙ্গিবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সুলতান আহমেদঃ শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সুলতান আহমেদ দ্বিতীয়বারের মতো কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে আছে। ইতিপূর্বে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড সিবিএ’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ৫৮ বছর বয়সী এ শ্রমিকনেতার জন্মস্থান মাদারীপুরের শিবচর।

শাহাবুদ্দিন মিয়াঃ শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোঃ শাহাবুদ্দিন মিয়া ইতিপূর্বে আদমজী জুট মিল সিবিএ’র প্রচার সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে তাকে চাকরীচ্যুত করা হয়। ২০০৩ সালে আদমজী জুট মিল চালু সংগ্রাম পরিষদ প্রতিষ্ঠা করে তিনি আদমজী জুট মিলের শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই সংগঠনের ব্যানারে তিনি শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

কাউসার আহমেদ পলাশঃ শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ ছাত্রজীবনে ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ফতুল্লা আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের সভাপতি, ইউনাইটেড ফেডারেশন অফ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এর কেন্দ্রীয় সভাপতি সহ শ্রমিক সংশ্লিষ্ট নানা সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন।

আজম খসরুঃ শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজম খসরু ইতিপূর্বে সোনালী ব্যাংক সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

আবদুল হালিমঃ যুব শ্রমিক লীগের আহবায়ক আবদুল হালিম তরুণ ও মেধাবী শ্রমিক নেতা হিসেবে আলোচনায় আছেন। তিনি অগ্রণী ব্যাংক সিবিএ’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ লেবার স্টাডিজ বিলস এর সদস্য।