দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মোট শেয়ার বিবেচনায় ৩৫ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ এক শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং ৩১টি কোম্পানি থেকে এক শতাংশের বেশি কমেছে। আর টাকার অঙ্কে এক কোটি টাকার বেশি নিট বিনিয়োগ হয়েছে ৯১ কোম্পানিতে এবং এক কোটি টাকার বেশি নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে ৫২ কোম্পানি থেকে।

অন্যদিকে, ১৬৬ কোম্পানিতে শেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারের সম্ভাব্য বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৬২১ কোটি টাকা এবং ১০৬ কোম্পানি থেকে নিট যে পরিমাণ শেয়ার কমেছে সেগুলোর সম্ভাব্য বাজার মূল্য ছিল প্রায় ২৭৮ কোটি টাকা।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশিত তালিকাভুক্ত ৩১১ কোম্পানির শেয়ারধারণের তথ্য পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৩১৯টি। এর মধ্যে বুধবার (২০ নভেম্বর ২০১৯) পর্যন্ত আট কোম্পানি শেয়ারধারণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেনি। এগুলো হলো- যমুনা ও পদ্মা অয়েল, অ্যাপোলো ইস্পাত, সিএনএটেক্স, তুংহাই নিটিং, সিলকো ফার্মা, সোনালী আঁশ ও মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমার শীর্ষে ছিল বীমা খাতের কোম্পানি। বীমা খাতের মার্কেন্টাইল, কন্টিনেন্টাল, প্রভাতীসহ অন্তত ২৬ বীমা কোম্পানি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে। তবে পপুলার লাইফ, ইসলামিক ইন্স্যুরেন্সসহ আরও কয়েকটি ইন্স্যুরেন্সে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার বেড়েছে।

যেসব কোম্পানি থেকে শেয়ার বেড়েছে : অক্টোবর মাসে তালিকাভুক্ত এসক্যোয়ার নিটে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার সর্বাধিক ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ (কোম্পানিটির মোট শেয়ার বিবেচনায়) বেড়ে ৪০ দশমিক ৩৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ কোম্পানির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও করপোরেট শেয়ারহোল্ডার এসক্যোয়ার ডাইং, এসক্যোয়ার এক্সেসরিজ এবং এসক্যোয়ার ইলেট্রনিক্সের ধারণ করা ২৭ দশমিক ১৮ শতাংশকে এতদিন ভুল হিসাবে উদ্যোক্তা-পরিচালক ক্যাটাগরির শেয়ার হিসেবে দেখানো হচ্ছিল। নভেম্বরে তা সংশোধন করে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারধারণ ক্যাটাগরিতে বদল করায় এ পরিবর্তন হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার বেড়েছে ৬ লাখ ৩৪ হাজার বা মোটের মাত্র শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় দুই কোটি টাকা।

অক্টোবর মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে শীর্ষ কোম্পানি ছিল সাফকো স্পিনিং মিলস। কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ বেড়েছে সাফকো স্পিনিংয়ে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছিল মোটের ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা অক্টোবর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা।

প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারধারণের হার বৃদ্ধির দিক থেকে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে ছিল যথাক্রমে পপুলার লাইফ, সালভো কেমিক্যাল, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স ও ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে পপুলার লাইফে মোটের ৫ শতাংশ বেড়ে ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

অন্যগুলোতে মোট শেয়ার বিবেচনায় ৪ শতাংশের ওপর বেড়েছে। এ ছাড়া ৩ থেকে প্রায় ৪ শতাংশ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারধারণের হার বেড়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, ইসলামিক ইন্স্যুরেন্স, সিমটেক্স ও ইনফরমেশন সার্ভিসেসে। ২ থেকে প্রায় ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে ফাইন ফুডস, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশনস, শাহ্?জালাল ইসলামী ব্যাংক, নিটল ইন্স্যুরেন্স, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স ও মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে।

টাকার অঙ্কে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিট বিনিয়োগ হয়েছে বা তাদের হিসাবে যোগ হওয়া শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল সর্বাধিক প্রায় ৭০ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস (৬৭ কোটি টাকা), শাহ্?জালাল ব্যাংক (৫২ কোটি টাকা), ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক (৩৫ কোটি টাকা), পপুলার লাইফ (৩০ কোটি টাকা) ও সিঙ্গার (২০ কোটি টাকা)।

যেসব কোম্পানি থেকে শেয়ার কমেছে : শেয়ারধারণের হার বিবেচনায় মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার মোটের ৩৩ শতাংশ থেকে কমে ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশে নেমেছে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমলেও গত মাসে বীমা কোম্পানিটির শেয়ারদর প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে ২৯ টাকা ছাড়িয়েছিল।

এর পরের অবস্থানে থাকা কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স থেকে মোটের সাড়ে ৮ শতাংশ, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংক থেকে সোয়া ৬ শতাংশ, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে। এ ছাড়া ২ শতাংশের বেশি কমেছে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, অ্যাকটিভ ফাইন, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, এফএএস ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স থেকে।

প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারধারণের পরিমাণ কমে যাওয়া শেয়ারগুলোর বাজারদর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, টাকার অঙ্কে উত্তরা ব্যাংক থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর পরিমাণ প্রায় ৭০ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে ছিল মার্কেন্টাইল ব্যাংক (১৩ কোটি টাকা), এসিআই (১১ কোটি টাকা), অ্যাকটিভ ফাইন (১১ কোটি টাকা), বিকন ফার্মা (সাড়ে নয় কোটি টাকা)।