দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : পুঁজিবাজারে সাধারণ বীমা কম্পানির বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়িয়ে বিনিয়োগ নীতিমালা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। ‘নন-লাইফ বীমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ’ শীর্ষক প্রবিধানমালায় নন-লাইফ বীমাকারীর সম্পদের ৬০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকারের ইস্যু করা গ্যারান্টিযুক্ত বন্ডেও বিনিয়োগ করতে পারবে বীমা কম্পানি।

সাধারণ বীমা কম্পানির জন্য এই সুযোগ রাখায় পুঁজিবাজারে বীমা কম্পানির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ বীমা কম্পানির বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের ৬০ শতাংশ এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। কিছু শর্তসাপেক্ষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানির অগ্রাধিকার বা সাধারণ শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও ডিবেঞ্চারের মাধ্যমে এ সম্পদ বিনিয়োগ করা যাবে। এই প্রবিধানমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

নন-লাইফ বীমা মূলত সাধারণ বীমা, যা গুডস অ্যান্ড প্রপাটিজকে বোঝায়। মোটর ইনস্যুরেন্স, হোম ইনস্যুরেন্স, মেরিন ইনস্যুরেন্স ও অগ্নি ইনস্যুরেন্স এই বীমার অন্তর্ভুক্ত। সূত্র জানায়, সাধারণ বীমা কম্পানিগুলোর জন্য পুঁজিবাজার বা সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সীমা ছিল বীমাকারীর সম্পদের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত, যা এবার বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখতে পারবে বীমা কম্পানি, যা আগে সুযোগ ছিল না।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, ‘বীমা কম্পানিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহী করতে এই বিধান রাখা হয়েছে। বীমা কম্পানির বিনিয়োগ বাড়লে পুঁজিবাজারও ভালো হবে। অন্যান্য বিনিয়োগকারীরাও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন।’

প্রবিধানমালা অনুযায়ী, সাধারণ বীমা কম্পানির সম্পদের একটি অংশ দেশের ভেতরে বিনিয়োগ করতে বাধ্যতামূলক শর্তারোপ করা হয়েছে। প্রত্যেক সাধারণ বীমা কম্পানিকে দায়ের অতিরিক্ত এক কোটি টাকা বা নিট প্রিমিয়াম আয়ের ১০ শতাংশ, এর মধ্যে যেটা বেশি হবে সেই পরিমাণ সম্পদ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে হবে। আর বাধ্যতামূলকভাবে বিনিয়োগের পর অতিরিক্ত অর্থ দেশে বা বিদেশে বিনিয়োগ করা যাবে। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের এবং যে দেশে বিনিয়োগ করা হবে সেই দেশের সরকারের অনুমোদন নিতে হবে।

নন-লাইফ বীমাকারীর সম্পদের বিনিয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, বীমা কম্পানির সম্পদের ৭.৫ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে। বাকি অর্থ শর্তসাপেক্ষে পুঁজিবাজার, শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড, স্থায়ী সম্পদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত, সাবসিডিয়ারি কম্পানিতে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া আইডিআরএর অনুমোদন নিয়ে অন্যান্য সম্পদের বিনিয়োগ করা যাবে।

সাধারণ বীমা কম্পানি সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের পর অবশিষ্ট সম্পদের ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অনুমোদিত ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কম্পানির অগ্রাধিকার সাধারণ শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবে। দুর্বল কম্পানির ‘জেড’ গ্রুপের কোনো কম্পানিতে বিনিয়োগ করা যাবে না।

এ ক্ষেত্রে কোনো একক কম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ওই কম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ ও সাধারণ বীমা কম্পানিটির সম্পদের ৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড ও ইউনিট ফান্ড এবং ডিবেঞ্চারে বীমা কম্পানি নন-লাইফ বীমাকারীর সম্পদের ৩৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। পুঁজিবাজারের মিউচুয়াল ফান্ড ও ইউনিট ফান্ডে সম্পদের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ও ডিবেঞ্চারে সম্পদের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে।

এ ছাড়া পুঁজিবাজারের বাইরে বাংলাদেশ সরকারের গ্যারান্টিযুক্ত ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে ইস্যু করা বন্ড ও বাংলাদেশে অনুমোদিত রেটিং সংস্থা থেকে ‘এএ’ বা সমমানের রেটিং মান পাওয়া বন্ডে সাধারণ বীমা কম্পানি সম্পদের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে। এ ছাড়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে ইস্যু করা ডিবেঞ্চার বা অন্যান্য সিকিউরিটিজে সম্পদের ৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে।