মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:  যুবলীগ রাজনীতি ও নির্বাচিত চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। ক্যাসিনোসহ নানা কেলেঙ্কারিতে যুবলীগ অনেকটা আস্থা সঙ্কটে পড়ে। সংগঠনটির ঐতিহ্য ফিরে আনতে দলের হাইকমান্ডকে নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজানো বা শুদ্ধি অভিযানে নামার মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। এ প্রেক্ষিতে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি তনয়কে শিক্ষকতা পেশা থেকে ছাড়িয়ে এনে রাজনীতির শিক্ষক হিসেবে চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছে।

যুবলীগের নামে সারা দেশের একদল দানব বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া যুবলীগকে ব্যবহার করে টু-প্রাইস কামানোসহ অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে মূল দল আওয়ামী লীগকে পর্যন্ত বিতর্কিত করে তোলে। অনেকটা ইমেজ সংকটে পড়ে দলীয় রাজনীতি। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া রুপসা থেকে পাথুরিয়া সর্বত্র সবখানে একটাই আলোচনা-সমালোচনা। তা হলো-এক, যুবলীগ তথা আওয়ামী লীগের রাজনীতি শেষ হয়ে গেল।

দুই, জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু হাল ছেড়ে দেবার মতো নেত্রী নন। তিনি ঠিকই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার মানুষদের এনে দানব মুক্ত করে যুবলীগকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে ফিরাবেন। তিন, যুবলীগ চেয়ারম্যান পরশ কী পারবেন দুষ্ট ক্ষত মুক্ত যুবকদের সৎ ও আলোকিত পথে ফিরিয়ে আনতে। শিক্ষকতা এবং রাজনীতির মূল কথা হলো স্বপ্ন। শিক্ষক তার ছাত্রকে গড়ে তোলেন প্রকৃত মানুষ হিসেবে। যাতে করে ছাত্র দেশ-জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে। এর পেছনে রয়েছে স্বপ্ন। দেশের জন্য মানুষের তরে নিজেকে বিলিয়ে শিক্ষক স্বপ্ন দেখে দেখে ছাত্রদের গড়ে তোলেন। একজন রাজনীতিকও অনেকটা একই রকম ভাবে দেশ-জাতিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন।

যুবলীগ চেয়ারম্যান পরশ শিক্ষক ও রাজনীতির কারখানায় গড়ে ওঠা একজন কারিগর। তার বেড়ে ওঠা থেকে আজ পর্যন্ত তিনি শিক্ষা নিয়েছেন। যুবলীগের মাধ্যমে এখন তার দেবার পালা। তিনি যে স্থান-কাল-পাত্রভেদে জায়গায় মতো সঠিক কাজের আঞ্জাম দেবেন তার পূর্বাভাসও ইতোমধ্যে দিয়েছেন। পরশের পক্ষ থেকে শুরুতে জাতির জনকের দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির কথা জানান দেয়ায় এটা পরিষ্কার হয়ে গেল বঙ্গবন্ধু তারই পিতা শেখ মনিকে এনে যুব সমাজকে আলোর মিছিলে একত্রিত করার সঠিক কাজ করেছেন। তেমনি বঙ্গবন্ধু কন্যা সভানেত্রী শেখ হাসিনা তারুণ্যের প্রতীক পরশকে এনে আওয়ামী রাজনীতিতে পরিবর্তনের সুবাতাসের ইঙ্গিত দিলেন।

পরশ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি ১০ বছর থেকে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেন পরশ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে ফের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ফজলে শামস পরশ ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের বড় ভাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিন তার বাবা-মা প্রাণ হারান। পরশের বর্তমান বয়স ৫১ বছর।

আ’লীগের নেতাকর্মীদের মতে, শেখ ফজলে শামস পরশ মাঝেই দেখা যায় শহীদ শেখ ফজলুক হক মনির প্রতিচ্ছবি। আর যার শরীরে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতার রক্ত। তার চেয়ে কে ভালবাসতে পারবে যুবলীগকে। যা আরো একবার প্রমাণ হলো যুবলীগের কমিটির মধ্যে দিয়ে। যুবক এ নেতার প্রশংসার পঞ্চমুখ আ’লীগের সিনিয়র নেতারাও। কারণ তিনি পেশায় একজন শিক্ষক এবং সৎ ব্যক্তি।

শেখ ফজলে শামস পরশ সত্যিকার অর্থে একজন চেইঞ্জ মেকার। একটি দেশের সার্বিক ও সুষম উন্নয়ন তখনই ঘটে যখন দলের মধ্যে শৃঙ্খলতা বিরাজ করে।
শেখ ফজলে শামস পরশ বাবা শেখ ফজুলক হক মনি যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা। তার বাবা ছিলেন গরীব মেহনতি মানুষের নেতা। তবে এ শহীদ নেতা ‘নেতার’ মতো আচরন করেন নি কখনো। খেটে খাওয়া মানুষের প্রাণের বন্ধু ছিলেন শেখ ফজুলক হক মনি।

পাদটীকা: যুবসমাজ প্যারালাইজড। জাতির পিতার আদর্শিক চেতনায় তারা আজ অনুভূতিহীন হয়ে আওয়ামী রাজনীতিকে কলুষিত করছে। এদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির আলোকে এনার্জেটিক করে তুলতে হবে। এর জন্য দরকার চেতনাকে শাণ দেয়া বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। তবে যুবসমাজ পিতৃ পরিচয় পাবে। আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হবে । এদের দেহ, মন, মনন, আত্মবিশ্বাস ও আত্মশুদ্ধি আসবে। আত্মসমালোচনা ও আত্মজিজ্ঞাসা গড়ে তুলতে হবে। এরাই জাগাবে লাখো কোটি জনতাকে । জাগবে আম-জনতা। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে জয় বাংলা রাজনীতি।