দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য একর পর এক সুসংবাদ আসছে। বীমা খাতে ডিজিটালাইজেশন ও এর পেনিট্রেশন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে। সম্প্রতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য কৃষি বীমা এবং গবাদি পশুর বীমা চালুর প্রস্তাব করা হয়। অন্যদিকে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য সরকারি কর্মচারীদের প্রচলিত গ্রুপ বীমার পরিবর্তে সমন্বিত জীবন বীমা এবং প্রবাসীদের জন্য জীবন বীমা চালুরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আর বীমা সংক্রান্ত এসব সিদ্ধান্ত বিশেষ চমক বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছেন।

তেমনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে ইপিএস। তালিকাভুক্ত ২৫ সাধারণ বীমা কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর,২০১৯) এ আয় বেড়েছে। কোম্পানিগুলোর অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষনে এ চিত্র উঠে এসেছে। এর মধ্যে পাঁচ কোম্পানির ইপিএসের শীর্ষে। পাঁচ কোম্পানি হলো: পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, অগ্রনী ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসেফিক, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৪৭ পয়সা। যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৮৩ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বও ২০১৯ এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৭ টাকা ২৩ পয়সা। প্রথম তিন প্রান্তিকে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৩৮ পয়সা। যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ২৮ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকা ৩৫ পয়সায়।

এদিকে প্রথম তিন প্রান্তিকে অগ্রনী ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ২৪ পয়সা। যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৬ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ৫১ পয়সা।

জানা যায়, হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৯৩ পয়সা। যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪৮ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর এ কোম্পানির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ৪৫ পয়সা। প্রথম তিন প্রান্তিকে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৭৭ পয়সা। যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৭১ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ২৪ টাকা ৩০ পয়সা।

এছাড়া প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে ব্যবসার নতুন নতুন ক্ষেত্র। সচেতন তরুণ প্রজন্মও প্রাধান্য দিচ্ছে ব্যবসাকে। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশেই বাড়ছে ট্রেড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীদের সংখ্যা। এবার এই ট্রেড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীদের সুরক্ষায় অগ্নিবীমা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে সাধারণ বীমা খাতের ব্যবসায়িক পরিধিও বাড়বে বলে জানিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

জানা যায়, সিটি করপোরেশন থেকে যারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে তাদের লাইসেন্স প্রাপ্তিতে বাধ্যতামূলকভাবে অগ্নিবীমার কাভারেজ নেয়ার নির্দেশনা এসেছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল থেকে। বিষয়টি নিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর আলোচনাও হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ বলেন, এটি অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা। আমরা পর্যায়ক্রমে অর্থমন্ত্রীর সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি। ট্রেড লাইসেন্সের সঙ্গে অগ্নিবীমার কাভারেজ না নেয়া হলে লাইসেন্স বাতিল করার বিধি আইনে সংযোজন করা হবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে ৭৮ হাজারের বেশি ট্রেড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী বেড়েছে। বর্তমানে দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে লাইসেন্সধারী মোট ব্যবসায়ীর সংখ্যা চার লাখ ৬৩ হাজারের মতো। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মার্কেট ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেশি থাকলেও লাইসেন্সধারী ব্যবসা বেশি উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়।

সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৫ হাজার ৩৮টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করেছে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নবায়ন ও ইস্যু করেছে ৪৩ হাজার ২৪২টি লাইসেন্স। দুই সিটি মিলিয়ে এক বছরে ট্রেড লাইলেন্সের সংখ্যা বেড়েছে ৭৮ হাজার ২৮০টি। ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করার প্রবণতা বাড়ার কারণে দুই সিটি করপোরেশনের রাজস্বও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে ভাগ হওয়ার সময় উত্তর সিটিতে ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯টি। ছয় বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৩৫২টি। সংস্থাটির সবচেয়ে বেশি ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে গুলশান, বনানী, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা এবং তেজগাঁও নিয়ে গঠিত অঞ্চল-৩ এলাকায়। শুধু ৩ নম্বর অঞ্চলেই রয়েছে ৯৬ হাজার ৯টি ট্রেড লাইসেন্স।

বীমা খাতের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ট্রেড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়লেও তাদের বীমা করার বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন তারা। ২০১৬ সালের আগস্টে ঢাকার বসুন্ধরা সিটির অগ্নিদুর্ঘটনায় শপিংমলটির ছোট ব্যবসায়ীদের অন্তত ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হলেও বীমা না থাকায় তা পুষিয়ে নিতে পারেননি অনেকেই। শুধু ঢাকা নয়, দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পথে বসছেন ছোট উদ্যোক্তারা। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছেন এমন নজিরও আছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বসুন্ধরা শপিংমল, ইস্টার্ন প্লাজা, যমুনা ফিউচার পার্ক, রাইফেলস স্কয়ার, মাল্টিপ্ল্যান প্লাজা ও সেজান পয়েন্টের মতো বড় শপিংমলে মোটা অংকের টাকা দিয়ে দোকান ভাড়া নিচ্ছেন ছোট উদ্যোক্তারা। এছাড়া রাজধানীসহ সাড়া দেশেই গড়ে উঠছে ছোট বড় নানন ধরনের সুপারশপ ও দোকান। এসব ছোট উদ্যোক্তাদের সুরক্ষায় তাদের অগ্নীবীমার আওতায় আনার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার।

উল্লেখ্য, কৃষি ও গবাদি পশুর বীমা চালু করা হলে সাধারণ কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ড ব্যাপক আকারে সম্প্রসারিত হবে। কেননা দেশের উৎপাদনশীল কৃষি পণ্য ও গবাদি পশু বীমার আওতায় আসলে কৃষক ও খামারিরা যেমন নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে। তেমনি বীমা কোম্পানিগুলোর আয়ের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে। এতে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ড দেশব্যাপী সম্প্রসারিত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারীদের প্রচলিত গ্রুপ বীমার পরিবর্তে সমন্বিত জীবন বীমা ও প্রবাসীদের জন্য জীবন বীমা চালু করা হলে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর পরিধিও অনেক বিস্তৃত হবে।