মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা :পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগে ভাটার টান লেগেছে। বাজারে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ টানা কমছেই। মনে হচ্ছে যে বিদেশী বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে অশনি সংকেত লাগছে। এর মধ্যে চার ইস্যুতে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়ছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন। সর্বশেষ নভেম্বর মাসেও কমেছে নিট বিদেশী বিনিয়োগ। এ সময়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছেন বেশী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বেশ কয়েকটি কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আমাদের বাজারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে: তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অস্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন, সুবিধাভুগী লেনদেন, দুর্বল আইপিও অনুমোদন, বাজারে সুশাসনের অনুপস্থিতি ইত্যাদি। সম্প্রতি আরও বড় দুটি বিষয় যোগ হয়েছে তাতে। এর একটি হচ্ছে বাজারের সবচেয়ে বড় মূলধনধারী কোম্পানি গ্রামীনফোনের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) টানাপোড়েন ও লাইসেন্স বাতিলের হুমকী এবং ডলারের বিপরীতে ডলারের টাকার মান কমে যাওয়া।

যদিও আমাদের বাজার মূলধন ও দৈনিক লেনদেনের বিপরীতে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ একেবারেই নগন্য, তবু নিট বিদেশী বিনিয়োগ প্রত্যাহারের বিষয়কে তাৎপর্যময় মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এটি দুটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত বিদেশী বিনিয়োগকারীরা অনেক বেশী সচেতন। তারা কমপ্লায়েন্স, সুশাসন ইত্যাদিকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। তাই তাদের নিট বিনিয়োগ কমে যাওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাজারে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে, রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় দেশী বিনিয়োগকারীরাও এই বাজারের উপর আর আস্থা রাখতে পারেব না। তখন কিন্তু বাজারে গতি ফেরানো বেশ কঠিন হবে।

বিশ্লেষকদের মতে আরও একটি কারণে বাজারে বিদেশী বিনিয়োগের বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটি হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক কারণ। আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেকেই, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ হ্রাস-বৃদ্ধির তথ্য দিয়ে বাজারের ভবিষ্যত বুঝার চেষ্টা করেন। তাই যখন বিদেশীদের নিট বিনিয়োগ কমে যায়, তখন তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

সূত্র অনুসারে, গত মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ২২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কিনেছেন। কিন্তু এ সময়ে তারা বিক্রি করেছেন ৩২১ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার। নিট বিনিয়োগ কমেছে ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এ সময়ে ওই পরিমাণ টাকা বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আগের মাস তথা অক্টোবর মাসে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ৯৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছিলেন। গত ২৩ মাসের মধ্যে ১৮ মাসই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছেন বেশি।