দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : পুঁজিবাজারে দিনভর ব্যাংক ও ইন্সুরেন্সের যুদ্ধ চললেও দিনশেষে ইন্সুরেন্সের উত্থান দেখা গেছে।  গতকাল লেনদেনের শুরুতে শুরুতে বড় উত্থানের আভাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তুলনামূলক বড় পতনেই শেষ হলো সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসের লেনদেন। যদিও উত্থান ধরে রাখতে ব্যাংক ও বীমা খাতের চেষ্টা অব্যাহত ছিল। কিন্তু অন্যান্য খাতের শেয়ার বিক্রির চাপে তা আর সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ সূচক ধরে রাখতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংক খাত। আজ সূচক পতনে স্কয়ার ফার্মার ভূমিকা ছিল ৭.১৮ শতাংশ, লাফার্জহোলসিমের ৫.৩৭ শতাংশ, ইউনাইটেড পাওয়ারের ২.৯৫ শতাংশ, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ২.৬০ শতাংশ এবং অলিম্পিক, কেপিসিএল ও বিএটিবিসির ভূমিকা ছিল যথাক্রমে ১ শতাংশের বেশী। অন্যদিকে সূচক ধরে রাখতে ৪.৬২ শতাংশ ভূমিকা রেখেছে ইসলামী ব্যাংক, ২.৫৫ শতাংশ অবদান রেখেছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, প্রায় ১ শতাংক করে ভূমিকা রেখেছে রূপালী ও পূবালী ব্যাংক। এদিকে আজ লেনদেন একক পাধান্য ছিল ব্যাংক খাতের। এদিন মোট লেনদেনের ২৫.৯৭ শতাংশ ছিল ব্যাংক খাতের দখলে। আর ১৩.৪৪ শতাংশ অবদান রেখে খাত হিসেবে এগিয়ে রয়েছে বীমা। পাশাপাশি বস্ত্র খাতের অবদান ছিল ১২.০৩ শতাংশ। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাধসের পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোয় ব্যাংক খাতের প্রভাব কমতে কমতে তলানীতে পৌঁছায়। অথচ এ খাতের কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হতো। তবে দীর্ঘ খরার পর হারানো স্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছে ব্যাংক খাত। সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ভালো মুনাফা করেছে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে আর্থিক বছরও শেষ হওয়ার পথে। এ কারণে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। আর তলানিতে থাকা ব্যাংক খাতের লেনদেন বৃদ্ধি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। একটি বড় খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম এবং লেনদেন বৃদ্ধি পুঁজিবাজারে অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

তবে কেউ কেউ বলছেন, পুঁজিবাজারে একটি গোষ্ঠী ক্রমাগত লাভ করে যাচ্ছে। যারা বাজারে ইস্যু আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে ইস্যু ম্যানেজার, যারা প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনছেন এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত, তারাই বেশি লাভবান হচ্ছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সে সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ, এ বাজারে এক পক্ষ ক্রমাগত লাভ করে যাচ্ছে, যা এক ধরনের ক্যাসিনোর মতো। বাজারকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে শুধু এক পক্ষ লাভ করে যাবে, অন্য পক্ষ কোনো লাভ করতে পারবে না। বাজারকে ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছে। ডিমিউচুয়ালাইজেশন বলতে যা বোঝায়, তার কিছুই হয়নি বাজারে। আসলে যদি আমের নাম পরিবর্তন করে জাম বলা হয়, তাহলে সেটি কিন্তু জাম হয়ে যাবে না। অর্থাৎ, ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছে শুধু নামেই। বাজারে যতগুলো কারসাজি হয়েছে, তার কোনো শাস্তি হয়নি। আসলে আমাদের দেশে শক্তিশালী বাজার ব্যবস্থা না হলে কোনো এ বিষয়ে বিচার পাওয়া খুবই কষ্টকর। দেশের এমন কোনো খাত নেই যেখানে দুর্নীতি হচ্ছে না।

এদিকে, বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতে উত্থান থাকলেও প্রথম ঘন্টা পর সেল প্রেসারে টানা নামতে থাকে সূচক। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪৭৩৪ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০৬৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৬২৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৪টির, কমেছে ১৯৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৪৮২ কোটি ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ২৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৪৭৫৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১০৭৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৬৪৪ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৫২১ কোটি ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৩৯ কোটি ১৭ লাখ ৬ হাজার টাকা। অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৩১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৭৫০ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৪১টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৩টির, কমেছে ১২২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ২৯ লাখ হাজার ১৬ টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, সব দেশেই এটি ওঠানামার মধ্যে থাকে এবং এটাই বাজারের প্রকৃত ধর্ম। তবে অধিকাংশ দেশেই এই ওঠানামার মধ্য দিয়েই বাজার অনেক ওপরে চলে গেছে, কিন্তু আমাদের দেশে এক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। কারণ আমাদের বাজারে আস্থাহীনতা অনেক বেশি। ব্যাংকের ব্যাপারে সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে, তারপরও বাজার কিছুটা খারাপ আচরণ করেছিল? কাজেই আমাদের আস্থার জায়গাটিতে কাজ করতে হবে বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।