দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য প্রতিনিয়ত জমি কিনছে কোম্পানিটি। এরই মধ্যে জমি কেনার তথ্য প্রকাশও করেছে। জমি কিনতে গিয়ে গত হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি অর্থের প্রবাহ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এতসবের পরও ব্যবসার ধরন প্রকাশ করছে না কোম্পানিটি।

জানা গেছে, কোম্পানি নতুন বিনিয়োগে গেলেও তার তথ্য না পেয়ে অন্ধকারে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি হচ্ছে এমজেএল বাংলাদেশ। সরকারি-বেসরকারি যৌথ মালিকানার কোম্পানি এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড। রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল ও বেসরকারি ইসি সিকিউরিটিজ যৌথভাবে এমজেএলের মালিকানায় রয়েছে। বেসরকারি খাতের ইস্টকোস্ট গ্রুপের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান হলো ইসি সিকিউরিটিজ।

ডিএসইতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কোম্পানিটির স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কিন্তু গত জুন শেষে কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ ৯৩২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ জমি কেনার ঘোষণা দেয়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়ায় ৫৩ বিঘা জমি কেনার বিষয়টি সম্পন্ন করেছে অনেকটাই গোপনে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭ কোটি টাকা। এছাড়া চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় এক দশমিক ৪৭ একর জমি কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৭ কোটি টাকা।

ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছে কোম্পানিটি। এজন্য জমি কিনছে একের পর এক। কিন্তু এই জমি কোন কাজে ব্যবহার করা হবে, তা বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়নি। বড় ধরনের বিনিয়োগ বা কোম্পানির আয়ে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে এমন তথ্য মূল্যসংবেদনশীল তথ্য হিসেবে ধরা হয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিধান অনুযায়ী, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ঘোষণা করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটি জমি কিনলেও এখনও কোনো বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থির করেনি, ব্যবসা সম্প্রসারণ করা হবে বলেই দায়িত্ব শেষ করেছে। কোম্পানিটি কোন ধরনের বিনিয়োগে যাচ্ছে, তা জানতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শেষ নেই। এ বিষয়ে কয়েকজন বিনিয়োগকারী জানান, বড় মূলধনি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হচ্ছে এমজেএল। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ থাকায় বিনিয়োগকারীদের এই কোম্পানির শেয়ারের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে, কিন্তু কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নতুন বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে খোলাসা করা হচ্ছে না-কবে নাগাদ নতুন জমি ব্যবহার শুরু করা হবে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা একপ্রকার অন্ধকারেই রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম মুকুল হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। তবে জানিয়েছেন, পরিকল্পনা অনুমোদন করা হলে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও পত্রিকার মাধ্যমে জানানো হবে।

জানা গেছে, এমজেএল বাংলাদেশের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ওমেরা পেট্রোলিয়াম। এই কোম্পানিটিতে ৬২ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার হচ্ছে এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেডের। সম্প্রতি ওমেরা এলপিজি নামে নতুন পণ্য বাজারজাত শুরু করেছে কোম্পানিটি। দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে ওমেরা পেট্রোলিয়াম। সম্প্রতি কোম্পানিটি ‘রোডশো’ সম্পন্ন করেছে। ওমেরাতে ৭৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে এমজেএল বাংলাদেশ। রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে এই অর্থ সংগ্রহ করবে কোম্পানিটি।

এমজেএলের হিসাববছর জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত। গত জুন শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে পাঁচ টাকা ৮৭ পয়সা, আগের বছরে যা ছিল ছয় টাকা ৬৬ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ৩৫ টাকা ৬৪ পয়সা, যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ৩৪ দশমিক শূন্য সাত টাকা। সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থের প্রবাহ হয়েছে ছয় টাকা ৬৯ পয়সা, যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ১১ টাকা ১৪ পয়সা।

সর্বশেষ হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ নগদ ও পাঁচ শতাংশ বোনাস। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ ও আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন এবং অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম)। এজন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৫ ডিসেম্বর।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুনের পর থেকে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার ধারণের হার ৭৭ দশমিক ৫৩ শতাংশেই রয়েছে। কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণের হার ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে নেমেছে শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশে।