দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : শেয়ারবাজারে তালিকাচ্যুত হয়েছে এমন কোম্পানির শেয়ার একটি আলাদা প্ল্যাটফর্মে কেনাবেচার সুযোগ আসছে। তবে অস্তিত্ব নেই এমন কোনো কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের সুযোগ হবে না। গত মঙ্গলবার শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এমন বিধান রেখে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড নামের একটি আইনি বিধান চূড়ান্ত করেছে।

অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) হলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিবেঞ্চার বা অন্য যে কোনো সিকিউরিটিজ কেনাবেচার প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) নামের বাজারে এ ধরনের শেয়ার কেনাবেচা সুযোগ আছে। তবে ওটিসির লেনদেন অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ। ক্রেতা বা বিক্রেতার পক্ষে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের সরাসরি স্টক এক্সচেঞ্জে গিয়ে কেনাবেচার অর্ডার দিতে হয়।

শেয়ার লেনদেনের নতুন প্ল্যাটফর্ম হবে ইলেকট্রনিক। এটা অনেকটা বর্তমানের অনলাইন সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারের মতো। ক্রেতা বা বিক্রেতা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেই শেয়ার কেনাবেচা করার সুযোগ পাবেন। এটা ওটিসির বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। নতুন বোর্ডে শুধু ইলেকট্রনিক শেয়ার বা সিকিউরিটিজ কেনাবেচা করা যাবে। কোনো কাগুজে শেয়ার এখানে লেনদেন করা যাবে না।

গত বছরের জুলাই মাসে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড চালুর বিষয়ে খসড়া বিধিমালা প্রকাশ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এ বিষয়ে জনমত যাচাই শেষে কিছু সংশোধন করে তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। অবশ্য জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রকাশিত খসড়ায় তালিকাচ্যুত কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ এ লেনদেন বোর্ডে থাকবে, তা উল্লেখ ছিল না।

বিএসইসি জানিয়েছে, অ-তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ (যেমন- অ-তালিকাভুক্ত শেয়ার, যে কোনো বন্ড, ডিবেঞ্চার, সুকুক, বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ইত্যাদি) নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে এ বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। এ ছাড়া সব ধরনের তালিকাচ্যুত সিকিউরিটিজ এবং বর্তমানে ওটিসি বাজারে থাকা কোম্পানি নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে এ বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।

বিএসইসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে জানান, খসড়া বিধানে বলা হয়েছিল, যে কোনো অ-তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ এ বোর্ডে লেনদেন করা যাবে। তালিকাচ্যুত হলে কোনো কোম্পানি অ-তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। এ হিসাবে এসব কোম্পানিরও লেনদেনের সুযোগ থাকবে। তবে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হবে। তবে শর্ত এখনও ঠিক করা হয়নি। এগুলো ঠিক করবে স্টক এক্সচেঞ্জ। তারা পৃথক প্রবিধিমালা (রেগুলেশনস) তৈরি করে খসড়া আকারে কমিশনে পাঠাবে। কমিশন তা অনুমোদন করলে কার্যকর হবে। অবশ্য কমিশন এরই মধ্যে একটি শর্ত নির্ধারণ করে দিয়েছে।

অস্তিত্বহীন কোনো কোম্পানির শেয়ার এই লেনদেন বোর্ডের মাধ্যমে কেনাবেচার সুযোগ তৈরি হবে কি না, এমন প্রশ্নে বিএসইসির কর্মকর্তা বলেন, সম্ভবত সে সুযোগ থাকবে না। কারণ এ বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে সংশ্নিষ্ট কোম্পানিকে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে আবেদন করতে হবে। যে কোম্পানির অস্তিত্বই নেই, তার পক্ষে ফি দেওয়া বা আবেদন করার সুযোগ নেই।

স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র জানিয়েছে, নতুন এ লেনদেন বোর্ডের মাধ্যমে বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচার প্রক্রিয়া সহজ হবে। যে কোনো ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকেই যে কেউ এ ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

কর্মকর্তারা জানান, দেশে এমন হাজার হাজার বেসরকারি ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে, যেগুলোর শেয়ার ব্যক্তিগত পর্যায়ে ও পরিচিতদের মধ্যে কেনাবেচা হয়। তারা চাইলে এ বোর্ডের মাধ্যমে কোনো কোম্পানির মালিক অন্য কারও কাছে শেয়ার বিক্রি করে মূলধন বাড়ানোর সুযোগ পাবেন। চাইলে নিজেরও কিছুটা শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন। এখানে শেয়ার কেনাবেচা সহজ হবে।