দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে আসছে একের পর এক সুখবর। তবুও অব্যাহত দর পতনে টালমাটাল অবস্থা পুঁজিবাজারের।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের অব্যাহত দর পতনের মূল সমস্যা সমাধান না হওয়ায় ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বাজার। ফেব্রুয়ারি থেকে টানা দর পতনে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফলিও মাইনাসে আছে। যাদের মার্জিন অ্যাকাউন্ট তাদের অবস্থা আরো খারাপ। তারা বলছেন, বিনিয়োগের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ লোকসানে থাকায় তারল্য সংকটে নতুন বিনিয়োগে যেতে পারছেনা বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে যতই দিন যাচ্ছে ততই দেশের পুঁজিবাজারের সব ধরনের সূচক নিন্মমুখী হচ্ছে। সরকারের কোনও উদ্যোগেই এই বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। পতনের এই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা মূলধন হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই কমেছে মূল্যসূচক। এতে পতন হয়েছে সবক’টি মূল্যসূচকের। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। অবশ্যই এর আগে, গত নভেম্বরের কিছু দিন কিছুটা চাঙাভাব এলেও ডিসেম্বরের শুরুতেই আবারও হোঁচট খায় শেয়ারবাজার।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউজের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিই এখন নিন্মমুখী । এর একটা প্রভাব পড়েছে দেশের শেয়ারবাজারে।’

মানুষের হাতে টাকা না থাকলে তখন কিছুই করার থাকে না। হয়তো তেমনটিই হয়েছে। কারণ, প্রত্যেকটি শেয়ারের বর্তমান মূল্য সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখন শেয়ার কেনার উত্তম সময়। সার্বিকভাবে বাজার এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।’ তথ্য বলছে, এই সপ্তাহে দুই দিন মূল্যসূচক সামান্য বাড়লেও বাকি তিন দিন বড় পতন হয়েছে।

বড় অঙ্কের বাজার মূলধন হারানোর পাশাপাশি সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের মূল্য কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মূল্য বেড়েছে। বিপরীতে মূল্য কমেছে ১৯৪টির।

আর ২১টির মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মূল্য কমায় সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল তিন লাখ ৫৬ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার ৩২৯ কোটি টাকা।

এদিকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৬০ দশমিক ১০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি কমেছে অন্য দু’টি সূচকও। এরমধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক কমেছে ২৬ দশমিক ৩২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর ডিএসই-৩০ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ৪১ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৩১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় দুই হাজার ৩৭৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। এই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৬৫ কোটি ৮ লাখ টাকা।

এদিকে ডিএসইতে লেনদেনের গতিও কিছুটা কমেছে। তবে, একটি ভালো খবর হলো দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ সাড়ে চারশ’ কোটি টাকার ওপরে রয়েছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয় ৪৬২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৩ কোটি ২ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের শেয়ার। কোম্পানিটির ৭৫ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৯ কোটি ৫২ লাখ টাকার। ৫০ কোটি ৭২ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স।