দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড গ্রীন ডেল্টা ও ডিবিএইচ প্রথম মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে এল আর গেস্নাবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে অপসারণ বা পরিবর্তনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞায় চেম্বার জজের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। গতকাল শুনানি শেষে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ নিম্ন আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ বহাল রাখার আদেশ দিয়েছে।

আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ওই দুই মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে এল আর গেস্নাবাল বাংলাদেশ লিমিটেডকে পরিবর্তনে আপাতত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান। এতে করে সংকটে পড়তে যাচ্ছে পুঁজিবাজারে ছয়টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক এল আর গেস্নাবাল বাংলাদেশ লিমিটেড। এ সম্পদ ব্যবস্থাপক অন্তত দুটি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হতে পারে। বিএসইসি কর্তৃক বড় অঙ্কের জরিমানার মুখেও পড়তে পারে।

মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, গ্রীন ডেল্টা ও ডিবিএইচ মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে এল আর গেস্নাবালকে যাতে অপসারণ করা না হয়, সেজন্য প্রতিষ্ঠানটি নিম্নআদালতে মামলা করে। নিম্ন আদালত এ মামলায় কারণ দর্শানোর নোটিস দিলেও সম্পদ ব্যবস্থাপক পরিবর্তনে কোনো অন্তর্র্বতী আদেশ কিংবা স্থগিতাদেশ দেয়নি। এর বিরুদ্ধে এল আর গেস্নাবাল আপিল করলে সম্পদ ব্যবস্থাপক পরিবর্তনে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থার আদেশ দেয় উচ্চ আদালতে। এ আদেশের বিরুদ্ধে এসইসি ও প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিটধারীরা আপিল করলে চেম্বার জজ হাইকোর্টের আদেশে স্থগিতাদেশ দেয়, যা গতকাল আপিল বিভাগ বহাল রাখে। নিম্ন আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে।

গত রোববার আপিল বিভাগে মামলার শুনানিতে এসইরি পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল বক্তব্য রাখেন। এরপর ইউনিটধারীদের পক্ষে ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান শুনানিতে বলেন, এল আর গেস্নাবাল ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম নামে এটি প্রাইভেট কোম্পানিতে, যা মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা, ২০০১ এর ৫৫(১) বিধির লঙ্ঘন। প্রাইভেট লিমিটেডের শেয়ার স্টক এক্সচেঞ্জ কিংবা বাজারে হস্তান্তরযোগ্য নয়। এ ধরনের বিনিয়োগে তারল্যের অভাব রয়েছে, যা মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ ধরনের কোম্পানিতে করপোরেট গভর্ন্যান্স স্বচ্ছ নয় কারণ এ ধরনের কোম্পানির ওপর এসইসির তত্ত্বাবধান নেই। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য আলাদা বিধিবিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেসব বিধিবিধান প্রযোজ্য নয়।

শুনানিতে তিনি আরও বলেন, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা লঙ্ঘন করে এর আগেও এল আর গেস্নাবাল কয়েকটি প্রাইভেট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে। যার কারণে ২০১৫ সালে এল গেস্নাবালকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে এসইসি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি তারা সম্প্রতি করেছে বিডিনিউজে বিনিয়োগের মাধ্যমে। বিডিনিউজের ১০০ টাকার অভিহিত মূল্যের শেয়ার ১২ হাজার ৫০০ টাকায় কিনেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি শেয়ারে ১২ হাজার ৪০০ টাকা প্রিমিয়াম নেওয়া হয়েছে। অথচ গত তিন বছর বিডিনিউজ মুনাফায় ছিল না। আর গত বছর মাত্র ১২ লাখ টাকা মুনাফা করেছে।

মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, বিডিনিউজে বিনিয়োগ করা ৫০ কোটি টাকার মধ্যে ২৫ কোটি টাকা গেছে কোম্পানির হিসেবে। আর অবশিষ্ট ২৫ কোটি টাকা গেছে বিডিনিউজের কর্ণধার তৌফিক ইমরোজ খালিদীর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসেবে। যদিও এ শেয়ার তিনি দুই মাস আগে ১০০ টাকা দরে কিনেছেন। এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি অতি মূল্যায়িত দরে বিডিনিউজের শেয়ার কেনা হয়েছে। অথচ মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। গত আগস্টে এল গেস্নাবাল পরিচালিত বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩০ সালে উন্নীত করা হয়। এরপর গত ২৮ সেপ্টেম্বর ডিবিএইচ প্রথম ও গ্রীন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তাসহ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ইউনিটধারী ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে (বিজিআইসি) সম্পদ ব্যবস্থাপক পরিবর্তনের চিঠি দেয়। ইউনিটধারীরা সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে এল আর গেস্নাবালকে পরিবর্তন ও নতুন সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে আইডিএলসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে নিয়োগে আলাদাভাবে চিঠি দেয় ট্রাস্টিকে। মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার ৩১(খ) ধারা অনুযায়ী, দুই-তৃতীয়াংশ ইউনিটধারী চাইলে কোনো কারণ ছাড়াই সম্পদ ব্যবস্থাপক পরিবর্তন করতে পারে ট্রাস্টি।

সম্পদ ব্যবস্থাপক পরিবর্তনের এমন প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই নিম্ন আদালতে মামলা করে এল আর গেস্নাবাল। এ মামলায় বিবাদী করা হয়েছে– এসইসি, এসইসির নির্বাহী পরিচালক (সার্ভিল্যান্স), এসইসির নির্বাহী পরিচালক (মিউচুয়াল ফান্ড) এবং ডিবিএইচ প্রথম ও গ্রীন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে (বিজিআইসি)। পরে আইডিএলসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টসহ সাত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী মামলাটিতে পক্ষভুক্ত হয়ে উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আপিল করে।